গারো উপজাতি

যুগ যুগ ধরে আমাদের এদেশে বহু উপজাতি বসবাস করছে। এর মধ্যে গারো উপজাতি অন্যতম। গারোরা নিজেদের মান্দি বলে পরিচয় দেয়, যার অর্থ হলো মানুষ। সেই অর্থে অনেকেই মনে করেন গারো পাহাড়ের নামানুসারে তাদের নাম করণ করা হয়েছে গারো। বাংলাদেশে অধিকাংশ গারোদের বসবাস ময়মনসিংহে এবং টাঙ্গাইলে। এছাড়া ঢাকা, রংপুর, সিলেটে অল্প সংখক গারোদের বসবাস দেখা যায়। বাংলাদেশে ৮০০০০ এর মতো গারো আছে বলে একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়।
গারোরা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে, যার নাম মান্দি ভাষা। কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই, তারা বাংলা বর্ণমালার সাহায্যে মান্দি ভাষা লেখে। গারোরা যুগ যুগ ধরে শিক্ষা থেকে দূরে ছিল, কিন্তু বর্তমানে আস্তে আস্তে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে বর্তমানে গারো জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশের মতো শিক্ষিত।

গারোরা আমাদের দেশে সবছেয়ে বেশি পরিচিত তাদের অদ্ভুত পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার জন্য। তাদের পারিবারিক ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ তাদের বংশ পরিচয় মাতৃধারার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এবং পরিবারের প্রধান ও সম্পত্তির মালিক স্ত্রী হয়ে থাকে। কোনো ছেলে-মেয়ের বিয়ে হলে সেই দম্পত্তি মেয়ের বাড়িতেই বসবাস করে।
গারোরা আগে সাধারণত জুম চাষ করত, কিন্তু ১৯৫০ সালে জুম চাষ সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ হলে মূলধারার কৃষি কাজে ফিরে আসে। বর্তমানে তারা আমাদের দেশের মূলধারার কৃষি কাজ করে। এবং তারা ধান, গমের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে আনারস উৎপাদন করে।

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে খাপ খেতে গিয়ে তাদের অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নেতৃত্ব। আগে গ্রাম প্রধান কিংবা গোত্র প্রধানরাই ছিল তাদের নেতা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবস্থা আস্তে আস্তে প্রভাব বিস্তার করছে। গড়ে উঠছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
গারোদের জীবন ব্যবস্থা অনেকটা সনাতন সামাজিক অ সাংস্কৃতিক বিশিষ্টের অধিকারী। তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনধারার কারণে তারা অনেক বেশি প্রশংসিত। যদিও একটু ধীর গতিতে হলেও গারোদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনে পরিবর্তন হচ্ছে। এবং স্বল্প পরিসরে হলেও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের জীবনে সভ্যতার চোঁয়া লাগছে। আশা করা যায় অচিরেই তারা বাংলাদেশের মূল সমাজ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।