প্রযুক্তি ও আমাদের শিশুসমাজ

আধুনিক যুগ প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারে প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রযুক্তি। আর তাই আমাদের জীবনে লেগেছে প্রযুক্তির চোয়া। আজকাল প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবন পরিচালনা করা অনেকটা অসম্ভব ব্যপার। তাই আমাদের সব সময় প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। আর এই প্রযুক্তির চোয়া থেকে আমাদের সকল বয়সীদের মতো শিশরাও দূরে নেই। দিন যত যাচ্ছে প্রযুক্তির সাথে শিশুসমাজের সম্পৃক্ততাও বাড়ছে। এটা অবশ্যই একটি আশার দিক। আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির সংস্পর্শে বেড়ে উঠছে।

কিন্তু আমরা জানি সবকিছুর ভালো খারাপ দুটি দিক থাকে! তেমনই প্রযুক্তিরও ভালোর সাথে খারাপ দিক আছে! আর আমাদের শিশুসমাজও এর খারাপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না! বিশেষ করে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে আমাদের শিশুরা বাড়িতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ভিডিও গেমস ইত্যাদি নিয়ে পরে থাকছে। প্রযুক্তির ডিভাইস গুলোর উপর অনেকটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পরছে। এ নিয়ে আমাদের অভিবাবক সমাজেও উদ্ধেগের সীমা নেই! আবার অনেক অভিবাবককে দেখা যায় এসব প্রযুক্তির ডিভাইস থেকে শিশুদেরকে জোড় করে দূরে সরানোর চেষ্টা করে। এতে অনেক সময় হিতে বিপরিতও হচ্ছে।
এখন আমাদের অনেকের মনে বড় প্রশ্ন হয়ে দ্বাড়িয়েছে “শিশুসমাজকে কি করে প্রযুক্তির নেশা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়?” কিন্তু আসলেই কি প্রযুক্তি থেকে শিশু সমাজকে নিরাপদ দূরত্বে আনা সম্ভব? আমরা জানি, মানুষ মাত্রই বিকল্প উত্তম সুযোগ গ্রহণকারী! শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। শিশুসমাজকে যদি আমরা প্রযুক্তির কালো থাবা থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চাই তাহলে, প্রযুক্তি থেকে উত্তম কিছু তাদের হাতে আমাদের তুলে দিতে হবে।

একটা সময় ছিল যখন আমাদের সমাজে বেশির ভাগ যৌথ পরিবার ছিল। পরিবারে এক সাথে থাকতো চাচা-চাচী, দাদা-দাদী, ফুফু, ভাই-বোন সহ আরো অনেকে। তখন শিশুদের নিয়ে সময় কাটানো কিংবা খেলা করার লোকের অভাব ছিল না। আধুনিক যুগে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে গড়ে উঠেছে একক পরিবার। পরিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের কারণে, পরিবারে শিশুরা হয়ে পরেছে একাকি! কিংবা আগে আমাদের আশপাশে প্রচুর খোলা জায়গা ছিল, যেখানে শিশুরা খেলা করে বেড়াতো। এখন সে জায়গাগুলোও সীমাবদ্ধ হয়ে পরেছে। সবকিছু মিলিয়ে শিশুসমাজের আনন্দের কিংবা সময় কাটানো জায়গাটা এখন অনেক সীমিত হয়ে পড়েছে। আর শিশুসমাজের এই শূন্য জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে প্রযুক্তির বিভিন্ন ডিভাইসগুলো। এখন আমরা যদি কোমলমতি শিশুসমাজকে প্রযুক্তির বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে তাদের বিনোদনের জন্য প্রযুক্তির বিকল্প কিছু নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ওদের বিনোদনের জন্য প্রযুক্তি থেকে উত্তম বিকল্প শিশুসমাজের হাতে তোলে দিতে পারলেই আমরা তাদেরকে প্রযুক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পারবো।