বিশ্বায়ন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো বিশ্বায়ন(Globalization)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে বিপর্যস্ত এই পৃথিবীতে রাজনৈতি ও অর্থনীতিকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার ধারণাই বিশ্বায়ন। যদিও বিশ্বায়নের ধারণা আরো অনেক পরোনো! আটারো শতকের শিল্প বিপ্লবের ফলে বাষ্পীয় পোত ও টেলিগ্রাম উন্নয়নের ফলে মানুষ বা কোম্পানিগুলোর মধ্যে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিব্যাপ্তি লাভ করে। তখন থেকেই বিশ্বায়ন শব্দটি আস্তে আস্তে আলোচনায় চলে আসে।
তবে বিশ্বায়নের ধারণা অতীত থেকে বর্তমানে অনেক বেশি ব্যাপকতা লাভ করেছে। “বিশ্বায়ন” শব্দটি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয়, এটি সার্বজনীন। বর্তমানে আমরা যে বিশ্বায়ন দেখতে পায়, এর ব্যাপকতা লাভ করে সেভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের ‘Perestroika’ ও ‘Glasnost’ দুটি নীতির মাধ্যমে। তিনি এই নীতির মাধ্যমে বৃহৎ সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্ত তার এই নীতি হিতে বিপরীত হয়, এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বায়নের ধারণাটি নতুন আঙ্গিকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন। এবং এ ধারণাটিই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিস্তৃতি লাভ করে।

‘বিশ্বায়ন’এর সংজ্ঞা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে। একদল বিশ্লেষক মনে করেন, বিশ্বায়ন হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবাধ বিকাশ। আরেকদল মনে করেন, বিশ্বায়ন হলো, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির প্রচার-প্রসার অর্থাৎ Globaleconomy গড়ে তোলার লক্ষে পুঁজিবাদের সংযোজন। আবার কিছু সংখ্যক বিশ্লেষক মনে করে, বিশ্ব রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আবদ্ধকরণই হলো বিশ্বায়ন। যদিও বাস্তবে এই তিনটি বিশ্লেষণেরই বাস্তব রূপ পাওয়া যায়।

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ ব্যাবস্থা যেমন সহজ হয়েছে অন্যদিকে একদেশের সাথে আরেক দেশের অর্থনীতিক বিনিময়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন কি অনেক জয়গায় কয়েকটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করছে। এছাড়া বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থাও শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে আবদ্ধকরণ করা হয়েছে, এমনকি অনেক শক্তিশালী দেশ একই উদ্দেশ্যে পরিচালিত কয়েকটি রাষ্ট্র নিয়ে রাজনৈতিক জোট গঠন করছে এবং অনেক দেশ সফলও হচ্ছে। যদিও বিশ্বায়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরেছে অর্থনীতির উপর। বিশ্বায়নের ফলে একদেশের সাথে আরেক দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই খুব সহজেই বলা যায় বিশ্বায়ন হলো রাজনীতি অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাক্তি, সমাজ, দেশ, জাতি ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার।