শিশু-কিশোরদের জন্য চাই নিরাপদ ইন্টারনেট

এই বিংশ শাতাব্দিকে বলা হয়ে থাকে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। আর এই তথ্য-প্রযুক্তির উপর নির্ভর করেই বর্তমান পৃথিবী দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও গতিশীল করতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এইসব প্রযুক্তির সাথে যে জাতি যত দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছে সে জাতি তত দ্রুত উন্নতি করছে। এশিয়ার চীন ও জাপান শুধু মাত্র প্রযুক্তির উপর নির্ভর করেই বিশ্বনেতৃত্বের স্বপ্ন দেখছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

এরই প্রেক্ষিতে শিশু থেকে বৃদ্ধ আমরা সবাই প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত। সবার একটাই লক্ষ্য দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা এই পৃথিবী থেকে আমরা যেন পিছিয়ে না পরি। বর্তমান এই বিশ্বে প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকাটাও হবে একটা বিশাল বোকামি। এই চিন্তা থেকে আমাদের সচেতন অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদেরকে প্রযুক্তির সংস্পর্শে নিয়ে যাচ্ছে, হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রযুক্তির নানা সরঞ্জাম। এতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিয়ে আগামির জাতিগঠনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমরাও আশান্বিত তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ভবিষতে বিশ্বনেতৃত্বে ভূমিকা রাখবে।
তথ্য-প্রযুক্তিকে নিয়ে সব আশার ভিড়েও কিছু শঙ্কার জয়গা তৈরি হয়েছে। সবকিছুরই ভালো দিকের পাশা-পাশি কিছু খারাপ দিক থাকে। তেমনই তথ্য-প্রযুক্তিরও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘ইন্টারনেট’ জগতের কিছু খারাপ প্রভাব পরছে আমাদের উপর,এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরছে শিশু-কিশোরদের উপর। কারণ আমাদের প্রযুক্তিবিদেরা ইন্টারনেট জগতকে এখনও পর্যাপ্ত নিরাপদ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হননি, শিশুদের জন্য ত নয়ই। এতে করে ইন্টারনেটের বিরূপ প্রভাব পরছে আমাদের শিশু-কিশোরদের উপর। উঠতি বয়সের অনেক তরুণ বিপথগামী হচ্ছে। জড়িয়ে পরছে সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধে।

ইন্টারনেটের উন্মুক্ত ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ একে খারাপ কাজে ব্যবাহার করছে। বিশেষ করে শিশু পর্নোগ্রাফি, যৌন হয়রানি, তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, ব্ল্যাক-মেইল, ড্রাগ ব্যবসা, মানি লন্ডারিং এর মতো অপরাধ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে থাকে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে তরুণরা। লোভে পরেই হউক কিংবা কৌতূহল বশতই হউক এসব খারাপ কাজে পা দিচ্ছে আমাদের শিশু-কিশোররা। অতীতে শুধুমাত্র উন্নত দেশেগুলোতে এসব অপরাধের কথা শোনা গেলেও এখন আস্তে আস্তে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এসব অপরাধ ছড়িয়ে পরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি দিন প্রায় চার শতাধিক তরুণ কোন না কোন ভাবে সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা অবশ্যয় অভিভাবক ও কর্তিপক্ষের জন্য শঙ্কার। এখন আমাদেরকে এই শঙ্কার পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।

আমরা অনেকেই এর সমাধান হিসেবে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট থেকে ফিরিয়ে আনার, কিংবা দূরে রাখার চিন্তা করি। কিন্তু এটি করলে আমাদের জন্য চরম ভুল হবে। কারণ, আজকে প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক দিয়ে যারা যত বেশি এগিয়ে যাবে, আগামীতে তারাই এই পৃথিবীর নেতৃত্ব দিবে। তাই শিশু-কিশোরদেরকে ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি “নিরাপদ ইন্টারনেট জগৎ” গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জন সচেতনতা সৃষ্টি করে শিশু-কিশোরদের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছতে পারবো।