গত দেড় দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লুটপাটে মূল ভূমিকা পালনকারীদের একজন ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ২০০৯ সালের পরের তিন বছরে বেসিক ব্যাংক লুটের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন নির্লিপ্ত। এমনকি সরকারের ভেতর অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও আবদুল হাই বাচ্চু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। সেসময় তাকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করার পেছনে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার নাম বারবার উঠে আসে।
শুধু বেসিক ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের বড় অনিয়মের ক্ষেত্রেও শেখ রেহানার নাম ঘন ঘন আলোচনায় এসেছে। এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং এমডি নিয়োগে শেখ রেহানার সুপারিশকেই প্রাধান্য দেয়া হতো। এমডি বা অন্য উচ্চ পদে পদোন্নতি পেতে তার অনুমোদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শেখ রেহানার পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোতে যেসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর দেখভাল করেছেন সালমান এফ রহমান এবং চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ব্যাংকের পদগুলোতে নিয়োগ পেতে প্রার্থীরা এ দুজনের মাধ্যমে ঘুস প্রদান করতেন। ঘুসের অর্থ পরবর্তীতে বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট গ্রুপগুলো পরিশোধ করত। এসব নিয়োগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও এমডিরা ঋণের নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ তৈরি করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২3 সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ সংখ্যা ডিসেম্বরে বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকায় পৌঁছায়। এসব খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো তীব্র মূলধন ঘাটতির মুখে পড়ে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মকর্তার কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি ঘটে। বিশেষ করে, জনতা, সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
বিশেষত বেসিক ব্যাংক গত এক দশকে বিপুল আর্থিক লোকসানে পড়ে। সরকারের দেয়া বাজেট সহায়তা সত্ত্বেও এ ব্যাংকটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের ঋণের ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ এখন খেলাপি।
অনেক অভিযোগে শেখ রেহানার পাশাপাশি তার সন্তানদেরও নাম উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যে তারা সম্পদ উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানার মেয়ে এবং যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মন্ত্রী, এসব অভিযোগের মুখে রয়েছেন।
বস্তুত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের এ চক্র দলীয় প্রভাব, ঘুস বাণিজ্য এবং নীতিহীন নেতৃত্বের কারণে কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পেরেছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।