বাংলাদেশের অর্থনীতির মোট আকার বর্তমানে প্রায় ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার (৪৬ হাজার ৫০০ কোটি) এবং এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের বাজারের আকার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার (১৫ হাজার কোটি)। বিশাল এ বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে সরবরাহ বাড়ানো এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করাই কার্যকর হতে পারে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা বাজারে অভিযান চালানোর মাধ্যমে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা কঠিন বলে মত তাদের।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে খাদ্যপণ্যের বাজারের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে আটা ও শস্যজাত পণ্য, যা মোট বাজারের প্রায় ১৮ শতাংশ। এছাড়া মাংস, সবজি, মাছ ও সি ফুড, দুগ্ধজাত পণ্য, এবং ফল ও বাদামজাত পণ্যের বাজার হিস্যা যথাক্রমে ১৪ শতাংশ, ১৪ শতাংশ, ১৩ শতাংশ, ১০ শতাংশ, এবং ১০ শতাংশ।
জার্মানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংস্থা স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশের খাদ্যপণ্যের বাজারের আকার ছিল ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সাল শেষে ১৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে এ খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮.৮৯ শতাংশ।
তবে নিয়মিতভাবে চাল, ডিম, মাংস, ও পোলট্রির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল অভিযান বা মূল্য নির্ধারণ করে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সরবরাহ সংকটের কারণে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, যা মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, “সরবরাহ সংকট থাকলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। তাই বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি বা আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়াতে হবে।”
দেশের খাদ্যপণ্যের বাজারে স্থানীয় কোম্পানিগুলোরই আধিপত্য বেশি। উদ্যোক্তারা মনে করেন, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য নিশ্চিত করাই উত্তম। মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, “দর নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং সাপ্লাই চেইন মজবুত করতে হবে।”
এদিকে, টিসিবি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহ করলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রম খুব বেশি কার্যকর নয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও বলছে, চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যই বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে অভিযান পরিচালনার পরিবর্তে গবেষণা ও পরিসংখ্যানভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ানোই বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পারে।