চার বিভাগকে প্রদেশে রূপান্তরের সুপারিশ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের
দেশের পুরোনো চারটি প্রশাসনিক বিভাগকে চারটি প্রদেশে রূপান্তর করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এই প্রদেশগুলোর হাতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদে অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রমের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।
বর্তমানে বাংলাদেশে আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ হিসেবে গঠনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে আলোচিত হলেও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশে মূলত চারটি বিভাগ—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে প্রদেশে পরিণত করার বিষয়টি উঠে এসেছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্কারের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয় সংশ্লিষ্ট কমিশন। এই অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধিরা চারটি প্রদেশ গঠনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। যদিও এ প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত নয়।
কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রদেশের কাঠামো, দায়িত্ব ও কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশে একাধিক প্রদেশ গঠনের ধারণা নতুন নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন একাধিকবার বাংলাদেশকে অন্তত পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের মাঝে কার্যকরভাবে প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রাদেশিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে চারটি প্রদেশ এবং বৃহত্তর ঢাকাকে কেন্দ্র করে একটি প্রদেশ গঠন করা যেতে পারে।
তবে এই ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তাঁর মতে, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ছোট একটি দেশ, যেখানে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বিভাজন নেই। প্রদেশ গঠন নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি বরং বিভাগগুলো শক্তিশালী করার পক্ষে মত দেন।
অন্যদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন সম্প্রতি উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবও দিয়েছে। এতে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী আসন স্থাপন করার সুপারিশ রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসন জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।