এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা ভিন্ন দেশের নাগরিকদের সন্তানরা আর অটোমেটিক নাগরিকত্ব পাবেন না, সোমবার ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহন করে এই আইন বাতিল ঘোষণা করেন যা তিনি নির্বাচনে প্রচারের কথা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ আদেশ ক্ষমতা বলে এই আইন বাতিল করেন। এতে করে বিভিন্ন দেশের লোক হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইমিগ্রেশন আইন ১৮৬৮ এর কারনে এতদিন মানুষ এই আইন ব্যবহার করে নাগরিকত্ব সুবিধা নিচ্ছিল। ট্রাম্প বলেছেন এটি একটি হাস্যকর আইন যা বাতিল করা জরুরি। বিভিন্ন কমিউনিটি মানুষ এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এবং মেক্সিকোর সীমান্তে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন।
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্প কীভাবে নতুন নিয়ম কার্যকর করবেন, তা এখনো অস্পষ্ট। কারণ, এই সুবিধাটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সুরক্ষিত। যদি ট্রাম্প এই সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করতে চান, তবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প ফেডারেল সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কোনো অবৈধ অভিবাসী বা সাময়িক ভিসাধারী ব্যক্তি সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশুকে নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথি না দিতে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এএলসিইউ) জানিয়েছে, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করবে। তাদের মতে, এই নির্দেশনা শুধু অসাংবিধানিক নয়, বরং এটি আমেরিকার মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধপূর্ণ এবং নির্মম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের এই আদেশের প্রভাব নিয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব শিশুর মা অবৈধভাবে বা পর্যটনসহ অন্যান্য ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা গ্রিন কার্ডধারী নন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। আদেশ অনুযায়ী, ৩০ দিন পর জন্ম নেওয়া শিশুর বাবা–মা দুজনের কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন বা গ্রিন কার্ড না থাকে, তবে সেই শিশু মার্কিন পাসপোর্ট বা ভিসা পাবে না।
এক শতাব্দী আগে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চতুর্দশ সংশোধনীর আওতায় বলেছিল, বিদেশি বাবা-মায়ের সন্তান হলেও যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুরা নাগরিকত্ব পাবে, যদি বাবা-মা কূটনীতিক না হন বা কূটনৈতিক দায়মুক্তির আওতায় না থাকেন। তবে, অভিবাসনে কড়াকড়ির পক্ষে থাকা আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের ১৮৯৮ সালের রায়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন। বর্তমান সুপ্রিম কোর্টও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নিয়ম কঠোর করার পক্ষে যেতে পারে।
এছাড়া, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ দেওয়ার বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কি না, তা নিয়েও এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।