ইউনিভার্সাল ক্রেডিট থেকে ভাড়া কাটা প্রক্রিয়া “অন্যায় ও অবৈধ” ঘোষণা হাইকোর্ট
হাইকোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে ঘোষণা করেছে যে, ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের মাধ্যমে ভাড়ার অর্থ কেটে নেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালাদের অনুরোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন করা “অন্যায়” এবং “অবৈধ”। এই রায় অনুযায়ী, এখন থেকে ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস (ডিডব্লিউপি) কর্তৃপক্ষকে দাবি উত্থাপন করার আগে ভাড়াটিয়াদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের মতামত নিতে হবে।
কেসের পটভূমি
এই আইনি মামলা ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে শুনানি হয়। মামলাটি দায়ের করেছিলেন নাথান রবার্টস নামে একজন ইউনিভার্সাল ক্রেডিট গ্রহণকারী এবং ভাড়াটিয়া। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তার বাড়িওয়ালার অনুরোধে ডিডব্লিউপি তার মাসিক ইউনিভার্সাল ক্রেডিট থেকে ৫০০ পাউন্ডেরও বেশি কেটে নেয়।
নাথান, যিনি একজন আইন স্নাতক এবং সাবেক পুলিশ কন্ট্রোল রুম কর্মী, তার ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের মাধ্যমে প্রতি মাসে মোট £১,২১৮ পেতেন। এই অর্থের মধ্যে £৩৬৪.৭৪ স্ট্যান্ডার্ড এলাউন্স, £৪৫৯.৬৪ হাউজিং কম্পোনেন্ট এবং তার অক্ষমতার জন্য £৩৯০.০৬ ইনক্যাপাসিটি টপ-আপ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নাথানের বাড়িওয়ালা দাবি করেন যে, তিনি দুই মাসের ভাড়ার দেনায় রয়েছেন এবং যদি এই বকেয়া বাড়তে থাকে, তবে তাকে উচ্ছেদের মুখে পড়তে হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ডিডব্লিউপি তার ভাড়ার কম্পোনেন্ট সরিয়ে দেয় এবং বকেয়া পরিশোধের জন্য আরও £৪৪.৭৪ কেটে নেয়।
অভিযোগ এবং আইনি লড়াই
নাথান অভিযোগ করেন যে ডিডব্লিউপি এই কাটা প্রক্রিয়া অনুমোদনের আগে তার সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি বা বিষয়টি তার স্বার্থের জন্য উপযুক্ত কি না তা বিবেচনা করেনি। তিনি আরও জানান যে, তার ভাড়া বাকি ছিল না বরং বাড়িওয়ালার রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অবহেলার কারণে তিনি ভাড়া প্রদান স্থগিত রেখেছিলেন। তদুপরি, তাকে এই কাটা প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোনো পূর্ব তথ্যও জানানো হয়নি।
মামলার তদন্তে উঠে আসে যে, এই ধরনের কাটা প্রক্রিয়া কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং ডিডব্লিউপির একটি ইচ্ছাকৃত নীতি। ডিডব্লিউপির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করেন যা বাড়িওয়ালার অনুরোধগুলো প্রক্রিয়া করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন দেয়। এই প্রক্রিয়ায় দাবি উত্থাপনের আগে ভাড়াটিয়াদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয় না।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিচারপতি ফোর্ডহ্যাম এই নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই পদ্ধতিটি ভাড়াটিয়াদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের মতামত উপেক্ষা করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভাড়াটিয়ারা প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জ করতে পারলেও আপিল প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং মাসের পর মাস সময় লাগে, যার ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাথান নিজেও এই কাটা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপিল করেন, তবে তার আবেদন তিনবার প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু ডিডব্লিউপি যখন জানতে পারে যে এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা সিদ্ধান্তটি পাল্টে দেয়।
নতুন সুরক্ষা নীতি
এই রায়ের ফলে ডিডব্লিউপিকে এখন নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা প্রতিবছর হাজার হাজার ভাড়াটিয়াকে রক্ষা করতে পারে। ডিডব্লিউপির এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এই রায় গভীরভাবে বিবেচনা করছি। আমাদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপর নির্ভরশীল এবং এটি সকলের জন্য সহজলভ্য থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
হাইকোর্টের এই রায় ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং ডিডব্লিউপিকে তাদের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বাধ্য করবে।