ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে দেশটির শেয়ারবাজারে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ প্রবেশের সূচনা হয়। তবে সম্প্রতি ভি কে বিজয়কুমারের তথ্য অনুযায়ী, চীন বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাঁর বক্তব্যে বলা হয়, চীনা প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নতুন সহযোগিতার ফলে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
বিজয়কুমার আরও জানান, “চীনা শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে এখনও কম, যার ফলে কিছু সময়ের জন্য ভারতে বিক্রি করে চীনে বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, এই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কারণ চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কিছু কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।”
এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঋণ বাজার থেকেও ব্যাপকভাবে তহবিল তুলে নিচ্ছেন। তারা সাধারণ ঋণ সীমা থেকে ৭ হাজার ৩৫২ কোটি রুপি এবং স্বেচ্ছামূলক ঋণ খাত থেকে ৩ হাজার ৮২২ কোটি রুপি তুলে নিয়েছেন।
সামগ্রিকভাবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হচ্ছে। ২০২৪ সালে তাদের বিনিয়োগ ভারতে অনেক কমে যায়, যখন নিট প্রবাহ ছিল মাত্র ৪২৭ কোটি রুপি। তুলনায়, ২০২৩ সালে ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির প্রতি আস্থা দেখিয়ে রেকর্ড ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি রুপির নিট বিদেশি বিনিয়োগ প্রবেশ করে, আর ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের বৃদ্ধি কারণে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি রুপি মূলধন দেশত্যাগ করা হয়।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে ২৩ হাজার ৭১০ কোটি রুপি বেশি তহবিল তুলে নিয়েছেন, যার ফলে এখন পর্যন্ত বছরের মোট বিদেশি পুঁজি প্রত্যাহারের পরিমাণ ১ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
ডিপোজিটরি তথ্য অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মাসে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ২৩ হাজার ৭১০ কোটি রুপি শেয়ার বিক্রি করেছেন, যেখানে জানুয়ারিতে বিক্রিত শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ৭৮ হাজার ২৭ কোটি রুপি। এই দুই মাস মিলিয়ে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৩৭ কোটি রুপি প্রত্যাহার হয়েছে।
এত ব্যাপক শেয়ার বিক্রয়ের ফলে নিফটি সূচক বছরের শুরু থেকে ৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন দেখাচ্ছে। মর্নিংস্টার ইনভেস্টমেন্ট রিসার্চ ইন্ডিয়ার সহযোগী পরিচালক হিমাংশু শ্রীবাস্তব জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুনভাবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের পাশাপাশি কয়েকটি দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদীয়মান বাজার, বিশেষ করে ভারতের বিনিয়োগ কৌশল পুনর্বিবেচনা করছেন। দেশীয় পরিস্থিতিতে করপোরেট আয়ের দুর্বলতা ও ভারতীয় রুপির অবিচ্ছিন্ন অবমূল্যায়ন দেশের সম্পদের আকর্ষণীয়তা হ্রাস করছে।