যুক্তরাজ্যে লাসা জ্বর আক্রান্ত এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি নাইজেরিয়া থেকে দেশটিতে ভ্রমণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা (UKHSA) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তারা এই তথ্য পেয়েছে যে, ওই ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় নাইজেরিয়া থেকে ইংল্যান্ডে আসেন। পরবর্তীতে তিনি নাইজেরিয়ায় ফিরে গেলে সেখানে তার লাসা জ্বর শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন সম্ভাব্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তদন্ত শুরু করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
লাসা জ্বর কী এবং কীভাবে ছড়ায়?
লাসা জ্বর একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা ইবোলা ভাইরাসের মতোই রক্তক্ষরণজনিত জ্বর সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগটি পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে গিনি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনে ব্যাপকভাবে ছড়ায়।
এই ভাইরাসের মূল বাহক হলো মাস্টোমাইস (Mastomys) নামের একধরনের ইঁদুর। সাধারণত সংক্রমিত খাবার গ্রহণ বা ভাইরাসযুক্ত বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণের ফলে মানুষ আক্রান্ত হয়। এছাড়াও, সংক্রমিত ইঁদুরের মল-মূত্র, লালা বা শরীরের অন্যান্য তরলের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, মানুষ আক্রান্ত ইঁদুর খেয়েও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।
যদিও এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সহজে ছড়ায় না, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা, মূত্র বা বীর্যের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
লাসা জ্বরের লক্ষণ ও ঝুঁকি
লাসা জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও গলা ব্যথা। তবে, কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, বমি, মুখমণ্ডলের ফোলা, বুক ও পেটে ব্যথার মতো জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সহজে সংক্রমিত হয় না, তাই দেশটির সাধারণ জনগণের জন্য ঝুঁকি খুবই কম।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও পরামর্শ
UKHSA-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মীরা চাঁদ বলেন,
“আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা টিম দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে, যাতে যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবাইকে চিহ্নিত করা যায়। সংক্রমণ হলে তারা যেন যথাযথ চিকিৎসা পান এবং পরীক্ষা করাতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে, লাসা জ্বর সহজে ছড়ায় না এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য সামগ্রিক ঝুঁকি খুবই কম।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, লাসা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সাধারণত এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পায়। পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের যদি জ্বর, দুর্বলতা, গলা ব্যথা বা রক্তক্ষরণের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খাবার ও পানীয় পরিষ্কার রাখা, ইঁদুরমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে নজরদারি বৃদ্ধি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, পশ্চিম আফ্রিকায় লাসা জ্বরের সংক্রমণ প্রতি বছর প্রায় এক লাখ থেকে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই ভাইরাস মহামারির আকার ধারণ করতে পারে কিনা, সে বিষয়েও গবেষণা চলছে।
যুক্তরাজ্যে লাসা জ্বরের এই ঘটনা স্বাস্থ্য মহলে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে, সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।