ব্রিটেনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গুপ্তচর তদন্তে রুশ এজেন্টরা দোষী সাব্যস্ত
মূল ঘটনা:
৪:৩৬ PM – দেখুন: রুশ এজেন্টদের গ্রেপ্তারের মুহূর্ত
৩:৩৬ PM – সালিসবুরি বিষক্রিয়া ঘটনার তথ্য ফাঁস করা সাংবাদিককে টার্গেট করেছিল গুপ্তচর চক্র
৩:১৩ PM – গুপ্তচর দলের নেতার গ্রেট ইয়ারমাউথের গেস্টহাউস থেকে গোপন ক্যামেরাযুক্ত টাই উদ্ধার
২:৫২ PM – ইউরোপের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত হতো গোয়েন্দা চক্রটি
২:৪৯ PM – ‘শিল্প-কারখানার মতো বিশাল আকারে’ গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছিল রুশ এজেন্টরা
⸻
ব্রিটেনে বৃহত্তম গুপ্তচরবৃত্তি মামলায় রুশ এজেন্টদের সাজা
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গুপ্তচর তদন্তের পর রুশ এজেন্টদের একটি দল দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
বুলগেরীয় নাগরিকদের নিয়ে গঠিত এই গুপ্তচর চক্র অপহরণ পরিকল্পনা, ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযান, ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর নজরদারি এবং চীনের সঙ্গে গোপন অস্ত্র বাণিজ্যে জড়িত ছিল। ব্রিটেনের গ্রেট ইয়ারমাউথে থাকা তাদের ঘাঁটি থেকে এই অপারেশন পরিচালিত হতো।
মস্কো থেকে এই চক্র নির্দেশনা পেত পলাতক প্রযুক্তি ব্যবসায়ী এবং ইউরোপের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি জান মার্সালেকের কাছ থেকে।
দোষী সাব্যস্ত গুপ্তচররা
ব্রিটেনের ওল্ড বেইলি আদালতে ১২ সপ্তাহের শুনানি শেষে নিচের ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে—
• ক্যাটরিন ইভানোভা (৩৩)
• ভানিয়া গ্যাবেরোভা (৩০)
• তিহোমির ইভানচেভ (৩৯)
এছাড়া, অরলিন রুসেভ (৪৭) ও বিজার জামবাজভ (৪৩) আদালতে রাশিয়ার জন্য গুপ্তচরবৃত্তির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। গত বছর তাদের বিচারের আগেই তারা দোষ স্বীকার করেন।
“স্পাই উপন্যাসের মতো ঘটনা” – মেট্রোপলিটন পুলিশ
ব্রিটেনের মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম কমান্ডের প্রধান ডমিনিক মারফি বলেছেন,
“এটি এমন একটি ঘটনা, যা আপনি সাধারণত কোনো গুপ্তচরবৃত্তির উপন্যাসে পড়ার আশা করেন। এটি আমার ২০ বছরের ক্যারিয়ারে অন্যতম বৃহৎ গুপ্তচর তদন্ত।”
তিনি আরও বলেন,
“এটি ছিল রাশিয়ার পক্ষ থেকে শিল্পকারখানার মতো বিশাল আকারে পরিচালিত গুপ্তচরবৃত্তি। তাদের অনেক কার্যক্রম যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের স্বাধীনতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।”
⸻
ব্রিটেনের শত্রুদের জন্য ‘সরাসরি সতর্কবার্তা’
ব্রিটেনের নিরাপত্তা মন্ত্রী ড্যান জারভিস জানিয়েছেন, এই গুপ্তচরদের দোষী সাব্যস্ত করার মাধ্যমে ব্রিটেনের শত্রুদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,
“যারা যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি তৈরি করছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অসাধারণ কাজের ফলেই এই রায় সম্ভব হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, এবং যে কেউ আমাদের নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।”
⸻
ব্রিটেনে আরও সক্রিয় রয়েছে রুশ গুপ্তচর চক্র!
মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার-টেররিজম প্রধান ডমিনিক মারফি সতর্ক করে বলেছেন,
“এটি যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার একমাত্র গুপ্তচর নেটওয়ার্ক নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমরা আরও কয়েকটি গুপ্তচর কার্যক্রম ব্যাহত করতে সক্ষম হয়েছি।”
⸻
গুপ্তচর চক্রের গোপন ঘাঁটি ও নজরদারি সরঞ্জাম
গুপ্তচর চক্রের নেতা অরলিন রুসেভের গ্রেট ইয়ারমাউথে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত গেস্টহাউস ছিল তাদের মূল ঘাঁটি।
জান মার্সালেকের সঙ্গে বার্তালাপে তিনি এই জায়গাটিকে “ইন্ডিয়ানা জোনস গ্যারেজ” বলে বর্ণনা করেছিলেন।
পুলিশ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই গেস্টহাউসে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গুপ্তচর সরঞ্জাম উদ্ধার করে, যার মধ্যে ছিল—
• গোপন ক্যামেরাযুক্ত টাই
• স্পাই ডিভাইস লুকানো ছিল সাধারণ জিনিসের মধ্যে, যেমন—একটি পাথর, টাই, কোকের বোতল এবং ‘মিনিয়ন্স’ কার্টুনের খেলনা
• বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোন, যেগুলো রুসেভ দাবি করেন তিনি ‘ইবে থেকে কিনে মেরামত করছিলেন’
মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম প্রধান ডমিনিক মারফি বলেন,
“এইসব ডিভাইস দেখে মনে হবে যেন আপনি কোনো গুপ্তচরবৃত্তির উপন্যাস পড়ছেন!”
⸻
বিশ্বব্যাপী নজরদারি বাড়াচ্ছে ব্রিটেন
এই ঘটনার পর ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাশিয়ার অন্যান্য গুপ্তচর নেটওয়ার্কের কার্যক্রম নজরদারির আওতায় এনেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া ইউরোপজুড়ে বিশাল গুপ্তচর নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
যুক্তরাজ্য এখন এই ধরনের আরও গুপ্তচর কার্যক্রম চিহ্নিত করতে তদন্ত জোরদার করছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।