কিয়েভ, ৮ মার্চ: প্রায় ১০,০০০ ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ফেঁসে গেছে এবং শত্রুপক্ষের নজরে আসতে না পারায় যুদ্ধ করতে হচ্ছে প্রায় অন্ধ অবস্থায়। ইউক্রেন সরকার মরিয়া হয়ে কুরস্কের দখল ধরে রাখতে চেয়েছিল, কারণ এটি সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত।
তবে পরিস্থিতি এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্ক থেকে পিছু হটার পরিকল্পনা করছে, কারণ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনী নতুন করে অগ্রসর হচ্ছে এবং তাদের সরবরাহ লাইন ধ্বংস করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। রুশ সেনাদের সঙ্গে এবার নতুন করে যোগ দিয়েছে উত্তর কোরিয়ার ‘স্টর্ম ব্রিগেড’, যারা কামিকাজে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধের প্রভাব
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া গোয়েন্দা সহায়তা স্থগিত করেছেন, যার ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী কৌশলগত দুর্বলতার সম্মুখীন হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া তাদের দীর্ঘ ও মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং রুশ বোমারু বিমান ও ড্রোন হামলা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে গেছে।
রুশ বাহিনীর অগ্রগতি
ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রধান ঘাঁটিগুলোর একটি ছিল কুরস্ক, যেখানে রাশিয়া এখন পূর্ব দিকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পশ্চিম দিকেও অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত কুরস্কের ভেতরে থাকা তিন-চতুর্থাংশ ইউক্রেনীয় সেনাকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
রাশিয়া সুদঝা অঞ্চলেও প্রবেশ করেছে, যা ইউক্রেনের সুমি ওবলাস্টের সাত মাইল উত্তরে অবস্থিত। এটি এমন একটি অঞ্চল যা ইউক্রেন গত বছর দখল করেছিল, যা পুতিনের জন্য অপমানজনক ছিল। তবে এখন রাশিয়া আবারও সেখানে আধিপত্য বিস্তার করছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে সরবরাহ লাইন বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন
ইউক্রেনীয় সেনারা জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী উত্তর কোরিয়ার ১২,০০০ সৈন্যকে যুক্ত করেছে, যারা শক্তিশালী রুশ ড্রোন ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে হামলা চালাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার সেনারা প্রতি দলে ৫০ জন করে আক্রমণ চালাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে মাত্র ৬ জন সৈন্য নিয়ে প্রতিরোধ করতে হচ্ছে।
এই বিপর্যয়ের কারণে ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধরে রাখতে পারছে না এবং পরিকল্পিতভাবে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইউক্রেনের এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের রসদ সংকট চরমে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যেই সেখানকার ব্রিজগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে গোলাবারুদ ও জ্বালানি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
চরম সংকটের মুখে ইউক্রেনীয় বাহিনী
সামরিক বিশ্লেষক পাসি পারোইনেন বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। ইউক্রেনীয় বাহিনী যদি দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে, তবে কুরস্কের ইউক্রেনীয় বাহিনী হয় ঘেরাও হবে, নয়তো বাধ্য হয়ে পিছু হটবে। কিন্তু পিছু হটার পথেও রুশ ড্রোন ও কামান হামলার ঝুঁকি রয়েছে।”
যদি ইউক্রেন কুরস্ক ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়, তবে এটি হবে তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় দুর্বল অবস্থানে পড়তে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধের ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেছে এবং রুশ বাহিনী এখন আরও স্বাধীনভাবে হামলার পরিকল্পনা করতে পারছে।
এদিকে, রাশিয়া বৃহস্পতিবার একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে। এসব হামলা পোল্যান্ড পর্যন্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর ভবিষ্যৎ এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। কুরস্কে তারা কি লড়াই চালিয়ে যাবে, নাকি রুশ বাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ করবে—এটাই এখন দেখার বিষয়।