দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের কাছে এক নৃশংস হামলায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে এবং এক ইসরায়েলি পর্যটক ও এক ভারতীয় নারীকে তিনজন ব্যক্তি গণধর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
“আজীবনের স্মরণীয় ভ্রমণ পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে”
ভারতে আজীবনের স্বপ্নের মতো একটি সফরে আসা এক পর্যটক গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যখন তার ভ্রমণ সঙ্গীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই দুই নারী – একজন ইসরায়েলি এবং অন্যজন ভারতীয় – কর্ণাটকের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিখ্যাত একটি ক্যানালের তীরে ছিলেন, যখন তাদের উপর এই বর্বর হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলার সময় তাদের সাথে থাকা একজন পুরুষ নিখোঁজ রয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ক্যানালে ফেলে দেওয়া হয়েছে, ফলে তিনি মারা গেছেন। অন্য একজন পুরুষ, যিনি আমেরিকান নাগরিক, তিনি কোনোভাবে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হন।
কীভাবে ঘটল নৃশংস এই হামলা?
এক ভুক্তভোগী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ও আরও চারজন পর্যটক রাত প্রায় বারোটার সময় টুংভদ্রা লেফট ব্যাংক ক্যানালের কাছে তারা দেখার জন্য গিয়েছিলেন। সে সময় তিনজন যুবক মোটরসাইকেলে সেখানে আসে এবং তারা পেট্রোল চায়।
পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্যটকদের হোস্ট তাদের জানায় যে কাছাকাছি কোনো পেট্রোল পাম্প নেই। এরপর অভিযুক্তরা টাকা দাবি করে এবং কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে নারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “তিন হামলাকারীর মধ্যে দুইজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, তৃতীয়জন পারেননি।”
হামলার পর দুষ্কৃতীরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে এবং ছয়টি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে দুইজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে তৃতীয় অভিযুক্ত এখনো পলাতক।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ
এই ঘটনার পর কর্ণাটক রাজ্যের সভাপতি বি.ওয়াই. বিজয়েন্দ্র প্রশাসনকে ‘অসচেতন ও উদাসীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সরকার রাজ্যে আসা সকল পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর মামলা
গঙ্গাবতী রুরাল থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির (Bharatiya Nyaya Sanhita – BNS) বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে:
• ধারা 309(6): চুরি বা জবরদস্তি
• ধারা 311: ডাকাতি বা আঘাত করার উদ্দেশ্যে লুট
• ধারা 64, 70(1): গণধর্ষণ
• ধারা 109: হত্যার চেষ্টা
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার পর ভুক্তভোগীরা একটি প্রাইভেট রিসোর্টে গিয়ে পুলিশকে খবর দেন এবং তাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ক্রমশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০২২ সালে পুলিশ ৩১,০০০টিরও বেশি ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত করেছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২০% বেশি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক লজ্জার কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এই ঘটনাটি আবারও ভারতে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।