বার্লিনের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এক নির্দেশেই বন্ধ হতে পারে জার্মানির কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি
ওয়াশিংটন ও ইউরোপের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শঙ্কার মূল কারণ মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে থাকা তথাকথিত ‘কিল সুইচ’, যা প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র দূর থেকেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। জার্মানির কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় ফেরেন, তাহলে এই কৌশলগত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইউরোপের আকাশ প্রতিরক্ষা অচল হয়ে পড়তে পারে।
এফ-৩৫ ‘কিল সুইচ’ কী?
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিশ্বের অন্যতম উন্নত স্টেলথ ফাইটার, যা বিভিন্ন মিত্রদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। তবে এতে এমন একটি সফটওয়্যার-নির্ভর প্রযুক্তি রয়েছে, যা মার্কিন কর্তৃপক্ষকে বিমানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে বিমানগুলো উড়তে পারবে না বা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না, যা বাস্তবিক অর্থে পুরো বিমান বাহিনীকে অচল করে দিতে পারে।
জার্মানির উদ্বেগ
জার্মানির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প যদি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তিনি ইউরোপের নিরাপত্তা নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারেন। বিশেষ করে, ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ নিতে পারেন। এর মধ্যে অন্যতম হতে পারে এফ-৩৫ সরবরাহ বন্ধ করা বা ‘কিল সুইচ’ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে সরবরাহকৃত বিমানগুলো নিষ্ক্রিয় করা।
নির্ভরশীলতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
জার্মানি সম্প্রতি কয়েক বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তির আওতায় এফ-৩৫ কেনার পরিকল্পনা করেছে। তবে এই খবর প্রকাশের পর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এফ-৩৫-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর অস্ত্রশস্ত্র কেনার আগে মিত্রদেশগুলোর উচিত বিকল্প ব্যবস্থা রাখা, যাতে কোনো দেশ এককভাবে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বদলানোর নজির
ট্রাম্প এর আগেও হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার নজির রেখেছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি ন্যাটো মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক ও সামরিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, ইউরোপকে নিজের প্রতিরক্ষা খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে।
ইউরোপের করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও স্বাধীন করা এবং বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহারের পথে হাঁটা। ফ্রান্স, জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ যৌথভাবে নতুন যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছে, যা এই ধরনের নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানির উদ্বেগ দেখিয়ে দিচ্ছে, আধুনিক যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নতি নয়, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলও বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বদলানোর প্রবণতা এবং এফ-৩৫-এর মতো অস্ত্রের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।