প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে, ডাউনিং স্ট্রিট লেবার দলের পিছনের সারির এমপিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। সরকার দাবি করছে যে, এই পরিবর্তনগুলো মানুষকে পুনরায় কর্মসংস্থানের দিকে ফেরাতে নৈতিকভাবে প্রয়োজনীয়, যদিও তা কঠিন সিদ্ধান্ত।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক এমপি সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষত, তারা উদ্বিগ্ন যে ছায়া চ্যান্সেলর রেচেল রিভস, সাবেক কনজারভেটিভ চ্যান্সেলর জর্জ অসবোর্নের তুলনায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। অসবোর্ন চার বছর ধরে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক ভাতা কাটছাঁট করলেও, তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভাতা (পিআইপি) বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছিলেন।

এই আলোচনায়, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তারা এমপিদের ব্যাপক অসন্তোষে বিস্মিত হয়েছেন, বিশেষ করে নতুন নির্বাচিত এমপিদের কাছ থেকে, যারা এতদিন লেবার সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। যদিও সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবুও যে কোনো নীতিগত পরিবর্তন বাজেট ঘাটতির সৃষ্টি করতে পারে।

পিআইপি স্থগিত রাখতে হলে সংসদীয় ভোটের প্রয়োজন হতে পারে, কারণ সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন আইন ১৯৯২ অনুসারে নির্দিষ্ট কিছু ভাতা অবশ্যই মূল্যস্ফীতির সাথে বাড়াতে হবে। লেবার সরকারের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায়, এই পরিবর্তনগুলো পাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, কিছু এমপি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে এমন কোনো পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিতে অনাগ্রহী। একজন এমপি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “আমরা সরকারে থাকলেও, নিজেকে পুরোপুরি অসহায় মনে হচ্ছে। আমাদের হতাশা তখনই বোঝা যাবে যখন আমরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাব।”

সরকার আশা করছে যে, নতুন কর্মসংস্থান প্রকল্প সংস্কারের পরিকল্পনা কিছু লেবার এমপিদের আশ্বস্ত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থদের পুনরায় কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনতে £১ বিলিয়ন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদিও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ট্রেজারি আপত্তি জানিয়েছে।

কাজ ও পেনশন সচিব লিজ কেনডাল, এই কর্মসংস্থান সহায়তা তহবিল নিশ্চিত করেছেন, যদিও ট্রেজারি এসব প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান ছিল। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সংসদীয় বিতর্কে স্বীকার করেছেন যে, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী ও তাদের পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, “আমরা একটি ভাঙা কল্যাণ ব্যবস্থা পেয়েছি, যা অর্থনৈতিক ও নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাই, এটি সংস্কার করতেই হবে। আমরা যাদের সুরক্ষা দরকার তাদের রক্ষা করব, তবে যারা কাজ করতে সক্ষম তাদের কর্মসংস্থানে ফেরানোর উদ্যোগও নেব। লেবার হল কাজের দল, তবে এটি ন্যায়বিচার ও সমতার দলও।”

কেনডাল আগামী সপ্তাহে সংসদে এই পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রগুলো স্বীকার করছে যে, প্রতিবন্ধী ভাতা হ্রাসের সিদ্ধান্ত “কঠিন ব্যাখ্যার” বিষয়, তবে তারা মনে করেন জনগণ সামগ্রিকভাবে কল্যাণ খাতে কাটছাঁটের পক্ষে।

প্রতিবন্ধী ভাতায় £৬ বিলিয়ন কাটছাঁটের বেশিরভাগই পিআইপি থেকে আসবে, যা চাকরির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। পিআইপি-র যোগ্যতার মানদণ্ড আরও কঠোর করা হবে, কিছু অর্থপ্রদান স্থগিত থাকবে, তবে এটি আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে না।

অন্য ছোট পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে— চাকরির সন্ধানকারীদের জন্য ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের হার বৃদ্ধি, তবে যারা কাজের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে তাদের ভাতা কমানো হবে, যাতে কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাজের প্রতি উৎসাহিত করা যায়।

সরকার ভাতার পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে কিছু পর্যালোচনা এখন থেকে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে হবে, কারণ কর্মকর্তারা মনে করেন যে টেলিফোন মূল্যায়ন ব্যবস্থা খুব বেশি শিথিল। তবে, কিছু মূল্যায়ন ফোনে অব্যাহত থাকবে।

দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থদের পুনরায় কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনতে £১ বিলিয়ন বিনিয়োগের অংশ হিসাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হবে, যা সহায়ক ফোন কল থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ও বিশেষায়িত কোর্স পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।

একজন সরকারি কর্মকর্তা রেচেল রিভসের দপ্তরকে “দূরদর্শিতার অভাবে ভুগছে” বলে সমালোচনা করেছেন, কারণ তারা কর্মসংস্থান প্রকল্পের মূল্য ও ব্যয় সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেনি। তবে ট্রেজারি এক সূত্র জানিয়েছে যে, রিভস কর্মসংস্থান প্রকল্পে পুনর্বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন।

এখন ২২ বছর বা তার বেশি বয়সী বেকার ব্যক্তিদের উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হবে, যখন ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সীদের জন্য সরকার ইতোমধ্যে একটি “যুব গ্যারান্টি” চালু করেছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থান বা শিক্ষায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

অর্থমন্ত্রী রাজস্ব ঘাটতি পূরণে কল্যাণ বাজেটে কাটছাঁটের দিকে নজর দিয়েছেন, কারণ ঋণের উচ্চ খরচ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি তার অর্থনৈতিক নীতির জন্য বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত তহবিল সংকুচিত করে ফেলেছে।

তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ ভাতা হ্রাস ও যোগ্যতার কঠোর শর্তাবলীই অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি (ওবিআর)-র স্প্রিং স্টেটমেন্টের পূর্বাভাসে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারগুলিকে তাৎক্ষণিক সঞ্চয়ের নিশ্চয়তা হিসাবে গণ্য করা হবে না।

সোমবার লেবার এমপিদের এক ব্যক্তিগত বৈঠকে, স্টারমার যুক্তরাজ্যের কল্যাণ ব্যবস্থাকে “সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সমন্বয়” বলে অভিহিত করেন, যেখানে কর্মসংস্থানে না থাকা বা প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা জনগণের সংখ্যা “অগ্রহণযোগ্য এবং অন্যায়” বলে মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন যে, “কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে”, যাতে কর্মক্ষম বয়সী জনগণের জন্য স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধী ভাতা কমিয়ে আনা যায়, যা ২০৩০ সালের মধ্যে £৭০ বিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে।

সরকার ইতোমধ্যে আগামী তিন বছরে £৩ বিলিয়ন ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।