যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে ৪৩টি দেশ, রাশিয়া ও বেলারুশের ভিসা কঠোর নিয়ন্ত্রণে
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে চলেছেন, যা ৪৩টি দেশকে প্রভাবিত করবে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়া ও বেলারুশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান কঠোরভাবে সীমিত করা হবে।
একটি ফাঁস হওয়া সরকারি স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে যে মস্কোর মিত্র দেশগুলোও কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে, এবং বেলারুশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
বিশ্বযুদ্ধের হুমকি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার নতুন নীতি
এই নতুন অভিবাসন নীতির প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের যুদ্ধবিরতি আলোচনা পরিচালনা করছেন। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে।
এছাড়া, একাধিক দেশকে ৬০ দিনের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা ত্রুটি সংশোধন করতে বলা হয়েছে, নতুবা তাদের নিষিদ্ধ তালিকায় রাখা হবে।
তিন ভাগে বিভক্ত নিষেধাজ্ঞার তালিকা
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখানো হয়েছে যে দেশগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যাদের উপর বিভিন্ন মাত্রায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
১ম তালিকা: সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ১১ দেশ
এই তালিকায় থাকা আফগানিস্তান, কিউবা, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে।
সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষিদ্ধ দেশসমূহ:
• আফগানিস্তান
• ভুটান
• কিউবা
• ইরান
• লিবিয়া
• উত্তর কোরিয়া
• সোমালিয়া
• সুদান
• সিরিয়া
• ভেনেজুয়েলা
• ইয়েমেন
২য় তালিকা: কড়া ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ১০ দেশ
এই দেশগুলোর নাগরিকদের পর্যটন, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অভিবাসী ভিসার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হতে হবে।
ভিসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত দেশসমূহ:
• বেলারুশ
• ইরিত্রিয়া
• হাইতি
• লাওস
• মিয়ানমার
• পাকিস্তান
• রাশিয়া
• সিয়েরা লিওন
• দক্ষিণ সুদান
• তুর্কমেনিস্তান
৩য় তালিকা: ২২ দেশকে ৬০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে
এই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা শর্ত পূরণ করার জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যদি তারা নিরাপত্তা ত্রুটি সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৬০ দিনের সময়সীমার মধ্যে থাকা দেশসমূহ:
• অ্যাঙ্গোলা
• অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা
• বেনিন
• বুর্কিনা ফাসো
• কম্বোডিয়া
• ক্যামেরুন
• কেপ ভার্দে
• চাদ
• কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
• ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো
• ডমিনিকা
• ইকুয়েটোরিয়াল গিনি
• গাম্বিয়া
• লাইবেরিয়া
• মালাউই
• মালি
• মৌরিতানিয়া
• সেন্ট কিটস ও নেভিস
• সেন্ট লুসিয়া
• সাও তোমে ও প্রিন্সিপ
• ভানুয়াতু
• জিম্বাবুয়ে
ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাখ্যা ও সমালোচনা
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এই তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং পরিবর্তন করা হতে পারে। এমনকি এটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের এই নতুন নীতি তার ২০১৭ সালের বিতর্কিত ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’-এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যদিও কিছু দেশ উভয় তালিকায় রয়েছে, তবে নতুন তালিকায় অনেক নতুন দেশও যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে, ভুটানের মতো শান্তিপূর্ণ দেশের অন্তর্ভুক্তি অনেককে অবাক করেছে।
নিরাপত্তা ত্রুটির অভিযোগ ও অর্থনৈতিক ভ্রমণকারীদের জন্য শর্ত
নতুন নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব দেশ পাসপোর্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, পর্যাপ্ত তথ্য ভাগ করে নিচ্ছে না, বা নিষিদ্ধ দেশগুলোর নাগরিকদের নাগরিকত্ব বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ধনী ব্যবসায়ীরা বা অভিবাসন ও পর্যটন ভিসার জন্য আবেদনকারীরা বিশেষ শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেতে পারেন। তাদের অবশ্যই মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হবে।
এখনও স্পষ্ট নয় যাদের আগে থেকে গ্রিন কার্ড বা বৈধ ভিসা রয়েছে, তারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন কি না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা ও নতুন অভিবাসন নীতি
এই নতুন নীতির ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যদি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় ব্যর্থতা আসে, তবে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, যদিও যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যদি চুক্তি না হয়, তবে বিশ্বের সামনে এক ভয়াবহ যুদ্ধ আসতে পারে।