বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে ব্রিটিশ সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতা করবে। সম্প্রতি লন্ডনে অবস্থানকালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়ে বিদেশে পাচার হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, সিভিল সোসাইটি, আইন সংস্থা, অর্থনৈতিক অপরাধ প্রতিরোধী সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসব সংস্থা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দিতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোর মতো বিভিন্ন দেশ এর আগে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, তাই বাংলাদেশও সফল হতে পারে। তিনি জানান, পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ব্যাপক হলেও যুক্তরাজ্য এই অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের হালচাল
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গভর্নর বলেন, গত কয়েক বছরে দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিম্নগতি, বিনিময় হার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। তবে বর্তমানে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট স্থিতিশীল রয়েছে এবং বিনিময় হারও নিয়ন্ত্রণে আছে।
তিনি জানান, রিজার্ভ বিক্রি না হলেও তা এখনো বাড়েনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণের কিস্তি না পাওয়াও রিজার্ভ স্থিতিশীল না থাকার অন্যতম কারণ। তবে আগামী জুন মাসে আইএমএফের কিস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গভর্নর আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপর সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের আর্থিক নীতিমালা বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, ফলে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ব্যাংক খাতের সংস্কার ও গ্রাহক নিরাপত্তা
গভর্নরের মতে, ব্যাংকগুলোর অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হলেও কিছু ব্যাংক এখনো সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংক খাতের সংকটের জন্য এস আলম গ্রুপ অনেকাংশে দায়ী। কিছু ব্যাংকের ৮৭% আমানত এককভাবে তারা নিয়ে গেছে, যা তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারল্য সংকট ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, প্রবাসীদের অর্থ এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলো যথাসময়ে প্রবাসীদের টাকা পরিশোধ করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখছে।
তিনি আরও জানান, অর্থ পাচার রোধ, ঋণখেলাপি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার একাধিক ব্যাংক একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিত আরও মজবুত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।