নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে ইলেকট্রিক বাইক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক ই-বাইকের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্ক বেড়েছে, বিশেষজ্ঞরা একে “টাইম বোমা” বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড জানিয়েছে, শহরে গড়ে প্রতি দুই দিনে একবার ই-বাইকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রেইনার্স লেন স্টেশন-এ একটি ই-বাইকে আগুন ধরে যাওয়ার মুহূর্তে সেটি ট্রেনের কামরায় ওঠার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে, সাটন স্টেশন-এ একটি ই-বাইকের বিস্ফোরণ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করেছিল।
এই ঘটনার পর ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL) ঘোষণা দিয়েছে যে, যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নন-ফোল্ডিং ই-বাইক লন্ডনের টিউব এবং রেল নেটওয়ার্কে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে সাইক্লিং কর্মীরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন, কারণ এটি বৈধ ই-বাইক ব্যবহারকারীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
⸻
নিষেধাজ্ঞা কবে থেকে কার্যকর হবে?
এই নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এরপর থেকে নন-ফোল্ডিং ই-বাইক টিউব, ওভারগ্রাউন্ড, এলিজাবেথ লাইন এবং ডিএলআর-এ নেওয়া যাবে না।
এছাড়া, যেসব সাধারণ সাইকেল ই-বাইক কনভার্সন কিটের মাধ্যমে ইলেকট্রিক বাইকে রূপান্তরিত হয়েছে, সেগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হবে। তবে TfL জানিয়েছে, ফোল্ডিং ই-বাইকগুলোর ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি পাওয়া যায়নি, তাই এগুলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
⸻
রূপান্তরিত ই-বাইক কেন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
TfL জানিয়েছে যে, বাজারে পাওয়া যায় এমন ইলেকট্রিক কনভার্সন কিট দিয়ে পরিবর্তিত বাইকগুলো মূলত আগুন লাগার বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তবে কারখানায় তৈরি ই-বাইক এবং কনভার্সন কিট দিয়ে পরিবর্তিত বাইকের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন।
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কনভার্সন কিট, ব্যাটারি এবং চার্জারের মানদণ্ড আরও কঠোর না হওয়া পর্যন্ত, নন-ফোল্ডিং ই-বাইকের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
⸻
TfL-এর বক্তব্য
TfL-এর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লিলি ম্যাটসন বলেছেন:
“আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো যাত্রী এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের সঙ্গে পরামর্শ করে ই-বাইকের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়েছে, এবং সেই ভিত্তিতে ৩১ মার্চ, ২০২৫ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। নির্ধারিত সময়ের পর, নন-ফোল্ডিং ই-বাইক নিয়ে টিউব এবং রেল পরিষেবায় যাতায়াত করা যাবে না।”
⸻
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জনমত
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের ডেপুটি কমিশনার চার্লি পাগসলে বলেছেন:
“এই নিষেধাজ্ঞা ই-বাইকের ব্যাটারির প্রকৃত ঝুঁকি স্বীকার করে নিয়েছে। যদিও ই-বাইক পরিবেশবান্ধব, বাস্তবতা হলো আমরা লন্ডনে প্রায় প্রতি দুই দিনে একটি করে ই-বাইক বা ই-স্কুটারের আগুন লাগার ঘটনা দেখছি। বিশেষত কনভার্সন কিট ও অবৈধভাবে পরিবর্তিত ই-বাইক নিয়ে আমাদের বেশি উদ্বেগ রয়েছে।”
তবে, সাইক্লিং কর্মীরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। লন্ডন সাইক্লিং ক্যাম্পেইন-এর প্রধান নির্বাহী টম ফিয়ানস বলেন:
“নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই নিষেধাজ্ঞা সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈধ ই-বাইকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে পারে। মূল সমস্যা হলো নিম্নমানের কনভার্সন কিট, ব্যাটারি ও অবৈধ ই-বাইকের বিক্রি নিয়ন্ত্রণের অভাব। সরকার, TfL এবং ডেলিভারি কোম্পানিগুলোকে এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।”
⸻
এখন কী হবে?
যদিও এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে বিপজ্জনক পরিবর্তিত ই-বাইক লন্ডনের রাস্তায় চলতে থাকবে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে ই-বাইকের আগুনের ঝুঁকি কমাতে পারবে, নাকি বৈধ ই-বাইক ব্যবহারকারীদের জন্য অসুবিধা তৈরি করবে—তা সময়ই বলে দেবে।