ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে এক যৌথ বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, পোল্যান্ড বা অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রে রাশিয়ার আক্রমণ হলে এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ।
তিনি আজ ওয়ারশতে এক বক্তব্যে বলেন, “যদি কেউ ভুলভাবে হিসাব করে এবং মনে করে যে পোল্যান্ড বা অন্য কোনো মিত্র দেশে হামলা চালিয়ে পার পেয়ে যাবে, তাহলে তারা আমাদের জোটের পূর্ণশক্তির মুখোমুখি হবে। আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে বিধ্বংসী। এই বার্তাটি ভ্লাদিমির পুতিন ও যেকোনো আগ্রাসী শক্তির কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত।”
ইউক্রেন যুদ্ধ ও কূটনৈতিক আলোচনা নিয়ে উদ্বেগ
ন্যাটো সীমান্তবর্তী দেশগুলোর, বিশেষত পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি পুতিনের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। এতে রাশিয়ার সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছে। যদিও এই প্রচেষ্টা ইউরোপের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য কতটা ইতিবাচক হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
ট্রাম্প ও রুটের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় রুটে বলেন, এই দশকের শেষের দিকে রাশিয়া ইউরোপে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা ভুলে গেলে চলবে না যে রাশিয়া এখনও আমাদের জোটের জন্য সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর হুমকি। তারা এখন একটি যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে, যা তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর সক্ষমতায় বিশাল প্রভাব ফেলবে।”
ট্রাম্প যদিও ইউক্রেনের জন্য শান্তি চুক্তি হলে রাশিয়া অন্য কোনো দেশে হামলা চালাবে না বলে মনে করেন, তবে ন্যাটোর নেতৃত্ব সতর্ক করে বলছে, পুতিন ইউরোপে নতুন করে আগ্রাসন চালাতে সক্ষম।
নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন ট্রাম্প ন্যাটোর ৮০ বছরের নিরাপত্তা গ্যারান্টি বাতিলের হুমকি দেওয়ার পর ইউরোপজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সুইডেন প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় ধরনের বৃদ্ধি আনতে যাচ্ছে—পরবর্তী দশকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ক্রোনার ($৩০ বিলিয়ন) ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন “শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক সম্প্রসারণ” বলে উল্লেখ করেছেন।
শুধু সুইডেনই নয়, ঐতিহ্যগতভাবে ঋণ-বিরোধী জার্মানিও সামরিক ও অবকাঠামো ব্যয়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি €৫০০ বিলিয়ন ($৫৪৭ বিলিয়ন, £৪২০ বিলিয়ন) মূল্যের একটি তহবিল অনুমোদন করা হয়েছে, যা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর আরোপিত কঠোর ঋণ গ্রহণের বিধিনিষেধ শিথিল করবে।
জার্মানির উদ্বেগ
জার্মান নীতিনির্ধারকরা বলছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির অনিশ্চয়তা তাদের সামরিক বাজেট বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
বাভারিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্কাস স্যোডার বলেন, “মস্কো থেকে আসা হুমকি এখনও বিদ্যমান, অথচ পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে যে সমর্থন আমরা একসময় পেতাম, তা আর আগের মতো নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের দৃঢ় সমর্থক, কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যে ভরসা আমরা করতাম, তা গভীরভাবে নড়বড়ে হয়ে গেছে। এবং শুধু আমার জন্য নয়, অনেক জার্মানই এখন উদ্বিগ্ন।”