মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনে রাশিয়াকে “যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা, উপস্থিতি এবং বৈশ্বিক স্বার্থের জন্য স্থায়ী সম্ভাব্য হুমকি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের দিনই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক টুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সামনে রাশিয়াকে “শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী” বলে উল্লেখ করেন। তবে, তিনি মস্কোকে সরাসরি “শত্রু” বলতে এড়িয়ে যান।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সুবিধাজনক অবস্থান
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে রাশিয়া এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থান থেকে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা সমর্থকদের চাপে ফেলে মস্কোর পছন্দ অনুযায়ী শান্তিচুক্তির পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাশিয়ার রয়েছে।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এতে খুব একটা আশাবাদী নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপলব্ধি করছেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে তার দেশের অবস্থা দুর্বল হচ্ছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও জানেন যে দীর্ঘ যুদ্ধ তার অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
তবুও, উভয় নেতা আপাতত দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ঝুঁকিকে “অসন্তোষজনক শান্তিচুক্তির” চেয়ে কম বিপজ্জনক মনে করছেন।
রাশিয়ার কৌশলগত ধৈর্য ও ইউক্রেনের চাপে পড়ার শঙ্কা
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “যুদ্ধক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতির কারণে রাশিয়া কৌশলগত ধৈর্য অবলম্বন করতে পারছে, কিন্তু ইউক্রেন যদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া মস্কোর দাবি মেনে নেয়, তবে তা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
পুতিনের ক্ষমতা আরও সুসংহত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের ক্ষমতা এখন আগের চেয়ে আরও দৃঢ়। তার শাসনামলের প্রায় ২৫ বছরে এখনই বিকল্প কোনো নেতৃত্বের আবির্ভাবের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
রাশিয়ার শেখা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে প্রায়ই আলোচনা হয়। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মস্কোও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা অস্ত্র ও গোয়েন্দা কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়াকে পশ্চিমা অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে ব্যাপক শিক্ষা দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যেসব প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে মস্কো এসব কৌশল শেয়ার করছে।”
এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও দীর্ঘমেয়াদী হতে চলেছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।