জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে রাশিয়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে একটি “পরীক্ষামূলক হামলা” চালাতে পারে, কারণ মস্কো এবং পশ্চিমাদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জার্মান ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (BND) জানিয়েছে, ক্রেমলিন ন্যাটোর সাথে একটি বৃহৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাহিনী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা।
এই সতর্কবার্তাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে, এবং উভয় দেশই কৃষ্ণ সাগরে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছাবে, যা ২০২১ সালের তুলনায় চারগুণ বেশি এবং দেশের মোট জিডিপির ৬% ছাড়িয়ে যাবে। ক্রেমলিন তার সেনাবাহিনী ১৫ লাখ সৈন্যে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে এবং ন্যাটোর সীমান্ত বরাবর সামরিক উপস্থিতি ৩০-৫০% বৃদ্ধি করতে চায়।
লিথুয়ানিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাও এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তারা বলছে, রাশিয়া ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করতে একটি সীমিত সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এদিকে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল স্যার রিচার্ড শিররেফ সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের হাতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য দুই বছরেরও কম সময় রয়েছে। তিনি অনুমান করেছেন যে রাশিয়ার বাহিনী দ্রুত এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ায় প্রবেশ করতে পারে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ন্যাটোর এস্তোনিয়ায় মোতায়েনকৃত বাহিনীকে পরাস্ত করতে পারে।
একই পরিস্থিতিতে, রাশিয়া ইংল্যান্ডের আরএএফ বিমান ঘাঁটিসহ পশ্চিম ইউরোপের কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করতে পারে, যার ফলে রুশ সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর পাল্টা হামলা চালানো হতে পারে। এরপর ন্যাটো তাদের বাহিনীকে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে মোতায়েন করবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রো রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটোর সবচেয়ে কঠোর সামরিক মহড়ার রিপোর্ট করেছে। রোমানিয়ার স্মার্দান অঞ্চলে অবস্থিত ন্যাটোর একটি ঘাঁটিতে, যা ইউক্রেন ও মলদোভার সীমানার কাছাকাছি, সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি হিসেবে এই মহড়া পরিচালিত হয়েছে।
ন্যাটো সদর দপ্তর (JFC Naples)-এর মিডিয়া অপারেশনের প্রধান কমান্ডার কার্ল হাওয়ার্ড বলেছেন, ইউরোপ বর্তমানে “যুদ্ধ মনোভাব” গ্রহণ করছে, এবং ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্রিটিশ সেনাদের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য সফলভাবে ১০,০০০ সৈন্য এই অঞ্চলে মোতায়েন করেছে। নিজের ৩৬ বছরের সামরিক ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সেনাদের দক্ষতা ও প্রস্তুতি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন এবং এটি ন্যাটোর জন্য যুক্তরাজ্যের সামরিক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী।