ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুধবার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জরুরি প্রতিরক্ষা বৈঠক করেছেন। তিনটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান সংকট বিশ্লেষণ করা।
ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলা চালাতে পারে, যদি দ্রুত কূটনৈতিক সমঝোতা না হয়। এমন বিশেষ প্রতিরক্ষা মন্ত্রিসভা বৈঠক ফ্রান্সে খুবই বিরল, যা এই সংকটের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক শক্তি বৃদ্ধি
মঙ্গলবার পেন্টাগন জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন। এটি মূলত ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন বিমান হামলা চালানোর অংশ হিসেবে করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা ধারণা করছেন, এই অভিযান ভবিষ্যতে ইরানের ওপর সম্ভাব্য মার্কিন হামলার পূর্বপ্রস্তুতি হতে পারে।
ট্রাম্পের হুমকি ও ইউরোপের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি রোববার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি ইরান সমঝোতায় না আসে, তাহলে দেশটির ওপর বোমাবর্ষণ ও আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।”
এদিকে, ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার প্যারিস সফরে আসছেন। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটো বৈঠকের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ইরান ইস্যুতে আলোচনা করতে চান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্ব শক্তিদের মধ্যে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার আওতায় তেহরান কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে রাজি হয়েছিল এবং বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এরপর থেকে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর মতে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে ইরান বারবার দাবি করেছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইউরোপের প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি, তারা ইরানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পর্যায়ের বেশ কয়েকটি আলোচনা করেছে, যাতে একটি নতুন সমঝোতার ভিত্তি তৈরি করা যায়।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা চেয়েছিলেন, আগস্টের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো, যাতে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ২০১৫ সালের চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই নতুন শর্ত নির্ধারণ ও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা সম্ভব হয়। তবে মার্কিন প্রশাসনের “সর্বোচ্চ চাপ” কৌশলের কারণে সমন্বয় জটিল হয়ে পড়েছে, বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।