যুক্তরাজ্যে নতুন পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ির বিক্রি নিষিদ্ধ করার সময়সীমা আবারও পরিবর্তিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্কনীতি থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলায়।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দেন, যার ফলে বিশ্ববাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করাও অন্যতম লক্ষ্য। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্য থেকে রপ্তানি হওয়া গাড়ির প্রতি ছয়টির একটি যায় যুক্তরাষ্ট্রে, যেগুলোর ওপর অন্তত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে, সোমবার জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কারখানায় এক ঘোষণায় স্টারমার জানান, নতুন পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা এখন কার্যকর হবে ২০৩০ সাল থেকে – যা আগের রক্ষণশীল সরকারের ঘোষিত ২০৩৫ সালের তুলনায় পাঁচ বছর আগে। তবে হাইব্রিড গাড়ি, যেমন টয়োটা প্রিয়াস, বিক্রি করা যাবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত, যাতে ধাপে ধাপে বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে রূপান্তর সহজ হয়।
পেট্রল ও ডিজেলচালিত ভ্যানও ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বিক্রি করা যাবে, যাতে ব্যবসায়িক খাতের ওপর পরিবর্তনের ধাক্কা কিছুটা কম পড়ে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি আরও কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত সহায়তা প্যাকেজও ঘোষণা করা হতে পারে।
তবে, অ্যাস্টন মার্টিন বা ম্যাকলারেনের মতো ‘সুপারকার’ নির্মাতারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। কারণ, তারা সীমিত সংখ্যক গাড়ি উৎপাদন করে এবং তাদের প্রভাব পরিবেশের ওপর তুলনামূলক কম। এছাড়া, যারা খুব ছোট পরিসরে গাড়ি উৎপাদন করে, তারাও শিথিল নিয়মের আওতায় থাকবে।
এছাড়া, বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে যে জরিমানা ধার্য ছিল, সেটাও কিছুটা শিথিল করা হবে। এমনকি ২০৩০ সালের আগে যেসব পেট্রল গাড়ি পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড পূরণ করবে, সেগুলোকেও বিক্রির লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কারখানায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্টারমার বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতাদের জন্য ভালো হবে – যেমন এখানকার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্রিটিশ বিদ্যুতে চলা ব্রিটিশ বৈদ্যুতিক গাড়ি, তৈরি হবে ব্রিটিশ শ্রমিকের হাতে – ব্রিটিশদের জন্য ব্রিটিশ গাড়ি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইলেকট্রিক গাড়িতে রূপান্তরের ফলে গড়পড়তা পরিবার বছরে প্রায় £১,১০০ সাশ্রয় করতে পারবে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতেও সাহায্য করবে।”
এই পরিবর্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য চায় নিজেদের ব্যবসা ও পরিবেশ– উভয়কে সামনে এগিয়ে নিতে, এমন এক সময়ে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমাগত অস্থির হয়ে উঠছে।