বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতার মাঝে ভ্লাদিমির পুতিন চুপচাপ অপেক্ষা করছেন – যেকোনো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাশিয়ার প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে চান তিনি। আর এই মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত শুল্কনীতি যেন রুশ নেতার জন্য একপ্রকার আনন্দের উৎস।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্ধু ও শত্রু – উভয় পক্ষের দিকেই কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন, যার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ঝাঁকুনি লেগেছে। যুক্তরাজ্য কিছুটা রেহাই পেলেও, অনেক দেশকেই ২০ শতাংশ বা তারও বেশি শুল্কের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই পদক্ষেপে শেয়ারবাজারে ধস নামে, বিশ্লেষকেরা হতবাক হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে চীনও বসে থাকেনি – তারা পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যার জবাবে ওয়াশিংটন আবারও ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক হুমকি দেয়। এ অবস্থায় পেছন থেকে পুরো নাটক উপভোগ করছেন পুতিন – কারণ রাশিয়া আগেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকায় তারা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব থেকে মুক্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহামের অধ্যাপক অ্যান্টনি গ্লিস সতর্ক করে বলেন, “ইতিহাস বলে শুল্কনীতি ও জাতীয়তাবাদী আগ্রাসনের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ১৮৮০ সালের জার্মান রাইখ বা ১৯৩০ দশকের আমেরিকা ও নাৎসি জার্মানি – দুই ক্ষেত্রেই যুদ্ধ এসেছিল দ্রুত। আমেরিকা যদি নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে নেয়, তবে ইউরোপের জন্য তা ভয়াবহ হবে। পুতিন এই বিশাল মনস্তাত্ত্বিক নাটক উপভোগ করছেন।”
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প হয়তো চীনকে চাপে রাখতে শুল্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন, যাতে শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতায় পৌঁছানো যায় – যেখানে আমেরিকাই বেশি সুবিধা পাবে।
বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকদের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে যে ট্রাম্পের শুল্কনীতি হয়তো বৈশ্বিকীকরণের সমাপ্তি ডেকে আনতে পারে। ট্রাম্পের যুক্তি, বিশ্ব তাকে ঠকিয়েছে – তাই শুল্ক হচ্ছে তাদের আলোচনার টেবিলে ফেরানোর উপায়। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এতে ভোক্তারা বিপদে পড়বেন, পণ্যের দাম বাড়বে এবং চাকরি ফেরানোর স্বপ্নও হয়তো ফাঁকা বুলি হয়েই থাকবে।