সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে গড়ে ওঠা চক্র এখন নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। এসব চক্রের মূল লক্ষ্য সমাজের প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিরা, এমনকি বিদেশি কূটনীতিকরাও বাদ যাচ্ছেন না।
দেশে এবং দেশের বাইরে, অফলাইন ও অনলাইন উভয় মাধ্যমে এ চক্র সক্রিয়। তারা সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে নিখুঁত ফাঁদ পেতে টার্গেট ব্যক্তিদের প্রেমের জালে ফাঁসায়। এরপর যৌনতার ফাঁদে ফেলে গোপনে ভিডিও ধারণ করে। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, সুন্দরী তরুণীরা প্রথমে বন্ধুত্ব এবং পরে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর ইন্টারনেট ভিডিও কলে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার সময় গোপন ভিডিও ধারণ করে তাদের জিম্মি করা হয়। অনেক সময় সরাসরি বাসায় ডেকে এনে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সদস্যরা টার্গেটের ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকে পড়ে, কখনো কখনো তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও যুক্ত হয়। এরপর টাকা না পেলে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। হাতিয়ে নেওয়া অর্থের একাংশ হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগীরা সামাজিক সম্মানের ভয়ে বেশিরভাগ সময় আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না। আবার আইনি ব্যবস্থা নিলেও, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক সময় অপরাধীরা বেরিয়ে আসে। এমনকি অভিযোগ আছে, কিছু প্রভাবশালী আইনজীবীও এই চক্রের ফাঁদে পড়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষরা সবচেয়ে বেশি এ ফাঁদে পড়ছেন। অনলাইন ছাড়াও ‘কলগার্ল’ সরবরাহের আড়ালে হানি ট্র্যাপের বিস্তার ঘটছে। সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারে প্রতি মাসে প্রায় ৩০টি হানি ট্র্যাপের গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে এ ধরনের অপরাধ ঠেকানো যাবে না। প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা ছাড়া মুক্তি নেই। হানি ট্র্যাপের শিকারদের মধ্যে অনেকেই প্রযুক্তির ঝুঁকি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন, যেটা চক্রগুলোর সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সৌদি প্রবাসী সোহেল মৃধা ইমো অ্যাপে এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে ভিডিও কলে নগ্ন অবস্থায় কথা বলার দৃশ্য ধারণ করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয় এবং বিকাশের মাধ্যমে চার লাখ টাকা আদায় করা হয়।
আরেক ভুক্তভোগী ফেসবুকের ‘লাভারস ওয়ার্ল্ড’ নামের গ্রুপের মাধ্যমে প্রতারিত হন। প্রথমে নারীদের সাথে বন্ধুত্ব, পরে যৌথ ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এনআইডি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে টাকা আদায়ের জন্য ভয় দেখানো হয়।
সাইবার পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং ইউটিউবের শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে এ ধরনের ফাঁদ পাতা হচ্ছে। এসব প্রতারণা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে।
সিআইডির ডিআইজি মো. আবুল বাশার তালুকদার বলেছেন, হানি ট্র্যাপ প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতার বিকল্প নেই। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।