বিশেষ প্রতিনিধি
বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটে যাওয়া বৈরী আবহাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা।
জলবায়ুর সাথে সরাসরি সম্পর্ক
বার্সেলোনা সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া তাপপ্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি প্রায় ৩০টির বেশি চরম আবহাওয়া ঘটনার সঙ্গে নির্দিষ্ট খাদ্যপণ্যের মূল্যের হঠাৎ উর্ধ্বগতির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ:
গবেষক ড. ম্যাক্সিমিলিয়ান কোটজ বলেন, “এ ধরনের তাপমাত্রা আগে কখনও দেখা যায়নি। এগুলো একটি স্থিতিশীল জলবায়ুর সাথে মিল খায় না। এগুলো মূলত মানুষের তৈরি কার্বন নিঃসরণের ফল।”
বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে?
বাংলাদেশের মতো আমদানি নির্ভর দেশগুলো জলবায়ুজনিত বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। পেঁয়াজ, রসুন, তেল, ডালসহ অনেক খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভর। বিশ্বের অন্য প্রান্তে তাপপ্রবাহ বা খরা হলেও তার প্রভাব পড়ছে ঢাকার বাজারে।
মূল্যবৃদ্ধি কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকও
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রাজ প্যাটেল বলেন, “খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিকও। যেমন ২০১০ সালে রাশিয়ার গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আফ্রিকার কিছু দেশে দাঙ্গা পর্যন্ত সৃষ্টি করে।”
নীতিনির্ধারকদের জন্য সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি শুধু বাজার নয়, পুরো দেশের আর্থিক নীতিতে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো যেখানে ভোক্তা ব্যয়ের বড় অংশই খাদ্যে ব্যয় হয়, সেখানে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়।
খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি হুমকিতে
দামের ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র ও স্বল্পআয়ের পরিবারগুলো। ফল ও সবজি কেনার সক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়।
ফুড ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক আনা টেইলর বলেন, “ফলমূল ও সবজি খাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি কমে যায় যখন খাদ্যের দাম বাড়ে। এটি সরাসরি পুষ্টিহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।”