যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে ভারসাম্য রক্ষায় নতুন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি, ৭ লাখ টন গম, এলএনজি, তুলা, ওষুধ, মূলধনী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য আমদানির পরিকল্পনা সামনে রেখে ওয়াশিংটনে রওনা হচ্ছে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (USTR)-এর সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রয়োজনে আলোচনা ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
আজকের পত্রিকাকে দেওয়া বক্তব্যে সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া চুক্তির প্রতিটি অনুচ্ছেদের জবাব আমরা ইতিমধ্যে দিয়েছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা, দুইবার যুক্তরাষ্ট্র সফর ও একাধিক অনলাইন বৈঠকের পর গত ২৩ জুলাই আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান জানানো হয়েছে। এবার মুখোমুখি আলোচনা হবে।’
চুক্তির আলোচনায় বোয়িং কেনার বিষয়টি একটি কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। আগে ১৪টি বোয়িং কেনার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৫টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য ক্রেতাদের মতোই অবস্থানে রয়েছি। তবে বাংলাদেশ বিমানের বহর দ্রুত সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, বোয়িং কেনা মানেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা নয়—প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকেও বিমান কেনা হবে।
সরকার শুধু বোয়িং নয়, কৃষিপণ্য ও শিল্প কাঁচামাল আমদানির দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। রেড সি অঞ্চলের অস্থিরতা বিবেচনায় বিকল্প সরবরাহ চেইন গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রতি নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি খাত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে বছরে ৯ মিলিয়নের বেশি টন গমের চাহিদা রয়েছে। আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি হতো, এখন আবার তা নিয়মিত করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
বিনিয়োগও আলোচনার অংশ হলেও মূল ফোকাস বাণিজ্যে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি (প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার) কমাতে ট্যারিফ কাঠামো পুনর্বিন্যাস করছে। বাংলাদেশ চায় ভারতের মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা না হলেও অন্তত সমান মর্যাদা পেতে।
বাণিজ্য সচিব আশাবাদী যে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি চাপ আসবে না। বরং তিনি মনে করেন, চীন থেকে সরিয়ে আনা কিছু উৎপাদন বাংলাদেশ ধরতে পারে। তার ভাষায়, ‘সরকার কাউকে চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আসছে, কারণ সেগুলোর গুণমান, সরবরাহ এবং অন্যান্য দিক থেকে সুবিধা রয়েছে।’