যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়মে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, কেবল উপস্থিত থাকা বা নির্দিষ্ট সময় কাটানোর ভিত্তিতে আর “ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন” (ILR) পাওয়া যাবে না। স্থায়ী হওয়ার শর্ত হবে সমাজ ও অর্থনীতিতে বাস্তব অবদান রাখা।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রসচিব শবানা মাহমুদ সোমবার লেবার পার্টির সম্মেলনে তাঁর প্রথম ভাষণে এই সংস্কারের পরিকল্পনা প্রকাশ করবেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানাবেন—
“স্থায়ী বসবাস কেবল চাকরি বা বেতনেই নয়, বরং কর প্রদান, নিজে নিজের খরচ বহন, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ এবং ভালো মানের ইংরেজি জানার মতো বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করবে।”
নতুন নিয়মে কী কী থাকছে?
- ৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর অপেক্ষা: বর্তমানে ৫ বছর পূর্ণ হলে বেশিরভাগ অভিবাসী ILR-এর আবেদন করতে পারেন। নতুন নিয়মে সেটি হবে ১০ বছর।
- অবদানভিত্তিক পয়েন্টস সিস্টেম: যাঁরা সমাজ বা অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখবেন, তাঁরা দ্রুত ILR পাবেন। কম অবদান রাখলে সময় আরও দীর্ঘ হতে পারে। কম অবদান কারীদের ভিসা রিনিউ হবে না এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
- কোনো অপরাধের রেকর্ড নয়: ফৌজদারি অপরাধ সরাসরি ILR বাতিল করবে। হালকা অপরাধ (যেমন ছোটখাটো আইনি লঙ্ঘন) ILR পাওয়ার সময় কয়েক বছর বিলম্বিত করতে পারে।
- সুবিধাভোগীদের জন্য কড়াকড়ি: যারা নিয়মিত সরকারি ভাতা (benefits) নিচ্ছেন, তাঁদের ILR পাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
- ভাষা ও সমাজে মেলবন্ধন: উচ্চ মানের ইংরেজি দক্ষতা এবং স্থানীয় সমাজে স্বেচ্ছাসেবামূলক অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কারা ছাড় পাচ্ছেন?
- ইউক্রেন ও হংকং থেকে আগতরা: সরকারি বিশেষ কর্মসূচির আওতায় যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ওপর নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
- লেবার বনাম রিফর্ম পার্টি: নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বে রিফর্ম পার্টি কয়েক দিন আগে প্রস্তাব দিয়েছিল— পুরনো ILR বাতিল করে নতুন কড়াকড়ি মানদণ্ডে সবাইকে পুনরায় আবেদন করতে হবে।
- এ প্রস্তাবকে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার “বর্ণবাদী” ও “অমানবিক” বলে অভিহিত করেছেন।
- ফারাজের পাল্টা জবাব: “বিদেশিদের খরচে জনগণকে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড দিতে হবে—না হলে লেবার আপনাকে বর্ণবাদী বলবে।”
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ১০ হাজার অভিবাসী ILR-এর আবেদন করবেন। এর মধ্যে প্রায় ৮০% মানুষ যুক্তরাজ্যের গড় বেতনের চেয়ে কম আয় করছেন।
শবানা মাহমুদের বার্তা
“আমরা আইনি অভিবাসন চাই, এটি ভালো বিষয়। তবে এখানে বসবাস ও কাজ করার পাশাপাশি সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্বশীল অবদান রাখাও অপরিহার্য।”