বিএনপি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করা তাঁর পক্ষে নয়। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির মতামতে দেখা গেছে, কমিশন প্রস্তাব করেছিল যে, নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে—কিন্তু বিএনপি এতে একমত নয়। এছাড়াও, বিএনপি এনসিসি (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) গঠনের বিরুদ্ধে এবং বরং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের প্রক্রিয়া বজায় রাখতে চায়, যার ফলে নিয়োগের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছিল যে, কেউ জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না; বিএনপি এ বিষয়ে যুক্তি দেয় যে, ধারাবাহিকভাবে তিনবার প্রধানমন্ত্রী থাকাটা সম্ভব হওয়া উচিত, তবে বিরতির মাধ্যমে পুনরায় আসন গ্রহণ করা যাবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ চার বছরের প্রস্তাবনায়ও বিএনপি একমত হয়নি—তারা সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর ধরে রাখার পক্ষে।
কমিশন আরও সুপারিশ করেছিল যে, নিম্ন ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন থাকলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের প্রয়োগ করা হবে, যা বিএনপি গ্রহণ করতে রাজি নয়। গত ৫ মার্চ সংস্কার-বিষয়ক কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় বিএনপি ৭০টি সুপারিশের মধ্যে কিছুতে একমত ও কিছুতে আংশিক একমত প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, সংসদকে প্রধান স্থান দেওয়া উচিত এবং অনাবশ্যক আলোচনায় অধ্যাদেশ বা গণভোটের পরিবর্তে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরও, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করলেও, বিএনপি বলেছে এই মুহূর্তে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ জরুরি নয়। এছাড়া, সংবিধানের বর্তমান প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন নেই—এবং সংসদের অভ্যন্তরীণ বিষয় যেমন দলীয় নেতা নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব, সংবিধানের আওতাধীন হওয়া উচিত নয়।
সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমিশন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে, যা বিএনপি সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করে না। পাশাপাশি, জরুরি অবস্থার সময় নাগরিক অধিকার রদ বা স্থগিত করার সুপারিশ, সংবিধানের মূলনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে সুপারিশ—যেমন বহুত্ববাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের অন্তর্ভুক্তি—এসব বিষয়েও বিএনপি তার পূর্বের অবস্থান বজায় রাখতে চায়।
অন্যান্য প্রস্তাবে বিএনপি ভোটদানের কিছু শর্তাবলী, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সমন্বয়, নির্বাচন প্রতিযোগিতার ন্যূনতম বয়স নিয়ে ও সংসদের ভেঙে দেওয়ার বিধান সম্পর্কেও মতামত দিয়েছে। এ ছাড়াও, হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে বিএনপি তার নিজস্ব পরিবর্তিত ধারণা উপস্থাপন করেছে।
এই মতামতগুলোর মাধ্যমে বিএনপি স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করেছে যে, তারা বর্তমান সংবিধানের কাঠামো ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় কোনো অতিরিক্ত পরিবর্তন করতে আগ্রহী নয় এবং পরবর্তীতে সংসদের আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন গ্রহণ করতে চায়।