যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার সম্প্রতি একটি নতুন অভিবাসন হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেছেন, যার লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে নেট অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা। এই পরিকল্পনায় কর্ম, শিক্ষা এবং পারিবারিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মাবলী প্রয়োগের মাধ্যমে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।
ভাষা দক্ষতা:
সব ধরনের ভিসার জন্য ইংরেজি ভাষায় নির্দিষ্ট স্তরের দক্ষতা আবশ্যক করা হয়েছে। মূল ভিসাধারীদের সাথে আসা নির্ভরশীলদেরও এখন থেকে অন্তত A1 (বেসিক ইউজার) স্তরের ইংরেজি জানতে হবে। স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার জন্য প্রয়োজন হবে অন্তত B2 (আপার ইন্টারমিডিয়েট) স্তরের দক্ষতা। ভিসা নবায়নের জন্য ইংরেজিতে উন্নতি দেখাতে হবে।
সেটেল্ড স্ট্যাটাস:
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছর বসবাসের পর সেটেল্ড স্ট্যাটাস পাওয়া যায়; নতুন পরিকল্পনায় এটি বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের মতো উচ্চ অবদানকারী পেশাজীবীরা পাঁচ বছর পর আবেদন করতে পারবেন। নতুন “বেরিভড প্যারেন্ট ভিসা” চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্রিটিশ বা সেটেল্ড সন্তানের মৃত্যুর পর অভিভাবকরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটেল্ড স্ট্যাটাস পেতে পারেন।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব:
সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখা ব্যক্তিরা দ্রুত নাগরিকত্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। “লাইফ ইন দ্য ইউকে” পরীক্ষায় সংস্কার আনা হবে।
সোশ্যাল কেয়ার ভিসা:
বিদেশি কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ২০২৮ সাল পর্যন্ত একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড থাকবে, যার মধ্যে বর্তমান ভিসাধারীরা এক্সটেনশন বা ভিসা পরিবর্তন করতে পারবেন।
স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা:
এই ভিসার জন্য এখন থেকে অন্তত স্নাতক ডিগ্রি আবশ্যক। পূর্বে এটি A-লেভেল সমমানের যোগ্যতা ছিল। বিদেশি নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে, বিশেষ করে “ক্রিটিক্যাল” স্কিলের ঘাটতি পূরণের জন্য। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য “গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা”, “ইনোভেটর ফাউন্ডার ভিসা” এবং “হাই পোটেনশিয়াল ইন্ডিভিজুয়াল রুট” এর মাধ্যমে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
স্টাডি ভিসা:
গ্র্যাজুয়েট ভিসার মেয়াদ ২ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ মাস করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্পনসর করা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। স্পনসরদের জন্য নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং যারা স্পনসর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তাদের নতুন শিক্ষার্থী নিয়োগে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে।
হিউম্যানিটারিয়ান ভিসা:
ইউক্রেন, হংকং এবং আফগানিস্তানের জন্য বিদ্যমান মানবিক ভিসা রুট চালু থাকবে। তবে এই স্কিমগুলোর স্পনসরশিপ ব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হবে।
ডোমেস্টিক ওয়ার্কার ভিসা:
আধুনিক দাসত্ব প্রতিরোধে এই ভিসা পুনর্বিবেচনা করা হবে, যা বর্তমানে বিদেশি গৃহকর্মীদের ৬ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেয়।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান:
বিদেশ থেকে কর্মী আনতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। অস্থায়ী ভিসায় থাকা কম দক্ষ কর্মীদের শোষণ রোধে, সরকার স্পনসর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সহজ করবে।
পারিবারিক জীবন:
“রাইট টু ফ্যামিলি লাইফ” (হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টের অনুচ্ছেদ ৮) ব্যবহার করে আশ্রয়প্রার্থীদের বহিষ্কার ঠেকানোর প্রবণতা রোধে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে। এই আইনে নির্ধারণ করা হবে কোন পরিস্থিতিতে এই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে।
বিদেশি অপরাধী:
হোম অফিসকে আরও বিস্তৃত ক্ষমতা দেওয়া হবে, যাতে তারা সহজে ভিসা বাতিল এবং বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিতে পারে, এমনকি যদি অপরাধের জন্য বিদেশে কারাদণ্ড না হয়ে থাকে। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
আইন প্রয়োগ:
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অভিবাসন নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যারা এমন দেশ থেকে এসেছে যেখানে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি, তাদের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ই-ভিসা চালু করা হয়েছে, যা অবৈধ কর্মসংস্থান রোধে সহায়তা করবে। প্রধান ব্যাংকগুলোকে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারিত করা হবে।
প্রাপ্তবয়স্কদেরকে ভুল করে শিশু হিসেবে চিহ্নিত না করতে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
ই-ভিসা, যা এখন শারীরিক নথি প্রতিস্থাপন করেছে, অবৈধ কাজ ও ওভারস্টে করা বা ভুল ভিসাধারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে সহায়তা করবে।
বড় ব্যাংকগুলি আইনত বাধ্য থাকবে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট দিতে অস্বীকার করতে এবং হোম অফিসকে জানাতে। এটি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও প্রসারিত করা হবে।
এই নতুন অভিবাসন নীতিমালার লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, যা ২০২৯ সালের মধ্যে নেট অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।