যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমার তার সরকারের নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা করার পর নিজ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকে মনে করছেন, ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে তিনি দলীয় আদর্শ থেকে সরে এসেছেন। একইসাথে, ব্যবসায়ী মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ নতুন নীতির ফলে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২০ সালে লেবার নেতা হওয়ার সময় স্টারমার বলেছিলেন: “আমরা কখনোই অভিবাসীদের বিরোধিতার যে রক্ষণশীল বা গণমাধ্যমপ্রসূত বর্ণনাভঙ্গি তা মেনে নিতে পারি না। কম মজুরি, আবাসন সংকট বা জনসেবার দুরবস্থার জন্য অভিবাসীরা দায়ী নয়, এর জন্য দায়ী হলো ব্যর্থ অর্থনৈতিক মডেল।”
তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্টারমারের দায়িত্ব আরও ব্যাপক। রিফর্ম ইউকে পার্টির উত্থান এবং নাইজেল ফারাজের প্রভাব তাকে অভিবাসন নিয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিতে প্রণোদিত করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সোমবার স্টারমার বলেন, “যুক্তরাজ্য যেন ‘অপরিচিতদের দ্বীপ’ না হয়ে ওঠে, সে জন্য আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।” তিনি অভিবাসন বৃদ্ধি নিয়ে পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকারের “কলঙ্কিত অধ্যায়” শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
লেবারের মধ্যমপন্থী এবং বামপন্থী অনেক এমপি এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছেন। লুটন নর্থের এমপি সারা ওয়েন বলেন, “ডানপন্থীদের পেছনে ছুটলে তা দেশকে অন্ধকার পথে নিয়ে যেতে পারে।” নটিংহাম ইস্টের এমপি নাদিয়া উইত্তোম বলেন, “সরকারের অভিবাসনবিরোধী ভাষা লজ্জাজনক ও বিপজ্জনক।”
স্বতন্ত্র এমপি জারাহ সুলতানা আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, স্টারমারের বক্তব্য প্রাক্তন টরি নেতা এনক পাওয়েলের ‘রিভার্স অব ব্লাড’ বিতর্কিত বক্তব্যের মত অনুরণিত হয়।
তবে ডাউনিং স্ট্রিট সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী অভিবাসনের ইতিবাচক দিক বোঝেন, কিন্তু একইসাথে নিয়ন্ত্রণ আর সংহতির প্রয়োজনও বোঝেন। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের উদ্বেগ, বিশেষ করে লেবার সমর্থকদের মধ্যে যারা রিফর্ম ইউকের দিকে ঝুঁকছেন, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
হোম অফিসের হিসেব অনুযায়ী, নতুন নীতির ফলে প্রতিবছর অভিবাসী প্রবেশের হার ১ লাখ কমে যেতে পারে। ২০২৯ সালের মধ্যে নেট মাইগ্রেশন ৩ লাখে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২০২৪ সালের জুনে ছিল ৭.২৮ লাখ।
অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশের নিজস্ব শ্রমশক্তিতে বিনিয়োগ করাই হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
স্টারমার সরাসরি বলেন, “কম দক্ষ অভিবাসীদের উচ্চ হারে প্রবেশ আসলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায় না।” বরং সরকারি অর্থনীতিবিদদের অভিবাসনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নতুনভাবে পর্যালোচনার অনুরোধ জানানো হবে বলেও জানান তার কর্মকর্তারা।