যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তনের মুখে পড়তে চলেছেন ২০২০ সালের পর আসা প্রায় ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী। লেবার সরকারের নতুন অভিবাসন শ্বেতপত্রে প্রস্তাব করা হয়েছে, স্থায়ী বসবাস (Indefinite Leave to Remain – ILR) এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিদেশি কর্মীদের জন্য আবশ্যিক বসবাসের সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হবে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, যারা ইতোমধ্যে ৫ বছর পূর্ণ করে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে চেয়েছিলেন, তাদেরকে আরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। যদিও শ্বেতপত্রে এই নিয়ম শুধুমাত্র ভবিষ্যতের আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে নাকি ২০২০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে আগত সকল অভিবাসীদের ওপর তা প্রযোজ্য হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে অভিবাসন নীতি-সম্পৃক্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।
লন্ডনের ভক্সহল এবং ক্যাম্বারওয়েল গ্রিন এলাকার লেবার এমপি ফ্লোরেন্স এশালোমি সংসদে বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকার বহু অভিবাসী এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবছেন, এই পরিস্থিতিতে হয়তো যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।”
এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে তা কনজারভেটিভ সরকারের প্রস্তাবিত নীতির তুলনায় আরও কঠোর হবে, কারণ টোরি সরকার এই নিয়ম ২০২১ সাল থেকে প্রযোজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
লেবার সরকারের অবস্থানের সমালোচনা
লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারের ভাষা এবং নীতিকে ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক লেবার এমপি ও অধিকারকর্মীরা। স্টারমার বলেছিলেন, সাম্প্রতিক অভিবাসনের ঢল যুক্তরাজ্যের জন্য “অপরিমেয় ক্ষতি” বয়ে এনেছে এবং দেশটি “অপরিচিতদের দ্বীপে” পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
এই মন্তব্যের পর রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ লেবার নেতার বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।” অন্যদিকে প্লেড কামরির নেত্রী লিজ সাভিল রবার্টস স্টারমারের ভাষাকে “অভিবাসীদের অপমান” বলে অভিহিত করেন।
জবাবে স্টারমার বলেন, “আমি এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে একসাথে চলি, অপরিচিত হিসেবে নয়। আগের সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন এই ঐক্যের ভিত্তিকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল।”
শিক্ষা খাতের আর্থিক সংকট আরও বাড়বে
এই অভিবাসন নীতির প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও কিছু নতুন বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রস্তাবিত ৬% আন্তর্জাতিক ছাত্র রাজস্ব কর এবং স্নাতকদের জন্য পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মেয়াদ ২ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ মাস করার প্রস্তাব উচ্চশিক্ষা খাতে নতুন সংকট তৈরি করবে বলে মনে করছেন শিক্ষানবিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানরা।
কিংস কলেজ লন্ডনের ভাইস-চ্যান্সেলর শিতিজ কাপুর বলেন, “নীতির নির্দিষ্ট বিবরণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ এই নীতির আন্তর্জাতিকভাবে কেমন প্রতিচ্ছবি পড়ে। ১৫০টি দেশের ছাত্ররা কীভাবে এই পরিবর্তন দেখবে?”
ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স-এর পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইউডব্লিউই ব্রিস্টলের ভাইস-চ্যান্সেলর স্টিভ ওয়েস্ট বলেন, “এই ট্যাক্স মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কমবে, যা আমাদের রাজস্ব হ্রাসের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলবে।”