আন্তর্জাতিক ডেস্ক | লন্ডন, মস্কো
রাশিয়া যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থিত পারমাণবিক অস্ত্রের গোপন ভাণ্ডারগুলোকে আধুনিকায়ন করছে বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সুইডিশ সম্প্রচার সংস্থা এসভিটি (SVT) প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত কালিনিনগ্রাদে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সন্দেহভাজন পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারগুলোতে ব্যাপক নির্মাণকাজ চলছে। এই ঘাঁটিগুলো ব্রিটেনের মাটি থেকে মাত্র ৮৮০ মাইল দূরে।
বিশ্লেষকদের মতে, কালিনিনগ্রাদে অন্তত ১০০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যেই পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্কান্দার-এম (Iskander-M) ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে, যা দুটি নেটো সদস্য রাষ্ট্র—পোল্যান্ড ও লিথুয়ারিয়ার—সীমানা ঘেঁষে অবস্থান করছে।
ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরাসরি যুক্তরাজ্যে আঘাত হানতে সক্ষম না হলেও, রাশিয়ার কালিবর-এনকে (Kalibr-NK) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের যথেষ্ট পাল্লা রয়েছে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে।
এছাড়া, ৯এম৭২৯ (SSC-8) নামক আরেকটি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও কালিনিনগ্রাদে সংরক্ষিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেলারুশ ও আর্কটিকে নতুন ঘাঁটি
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাস্থল হচ্ছে আসিপোভিচি ঘাঁটি (Asipovichy Base)—যেটি বেলারুশে অবস্থিত এবং একসময় সোভিয়েত পারমাণবিক ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ১,০০০ মাইল দূরে।
নতুন স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, সেখানে নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রেলপথের জন্য লোডিং প্ল্যাটফর্ম এবং উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মিত হচ্ছে।
এছাড়া, ঘাঁটিতে তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ ও আয়োডিন সংরক্ষণ ব্যবস্থাও স্থাপন করা হয়েছে—যা পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কোলা উপদ্বীপে গোপন বাংকার এবং পারমাণবিক পরীক্ষা?
আরও উত্তরের দিকে, কোলা উপদ্বীপের গাজিয়েয়েভো ঘাঁটিতে গত এক দশকে অন্তত ১২টি গোপন পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণাগার নির্মাণ করেছে রাশিয়া। ঘাঁটি নরওয়ের নেটো সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ মাইল দূরে।
তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, আর্কটিক অঞ্চলের প্রত্যন্ত দ্বীপপুঞ্জ নোভায়া জেমলিয়ায় (Novaya Zemlya) নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতির আলামত পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেছেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রুশ রাজনীতিকরা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আন্দ্রেই গুরুলেভ ঘাঁটি থেকে এক পোস্টে লেখেন,
“আমি এই পরীক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারতাম, কিন্তু দুঃখজনকভাবে পারছি না। শুধু এতটুকু বলতে পারি—আমরা সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।”
উল্লেখ্য, নোভায়া জেমলিয়া সোভিয়েত আমলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান। ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা “Tsar Bomb” এখানেই বিস্ফোরিত হয়। এর বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে পৃথিবী কয়েকবার কেঁপে উঠেছিল এবং এর মাশরুম মেঘ ৩৭ মাইল উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।
১৯৫৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সেখানে মোট ১৩০টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়, যার মধ্যে ৮৬টি ছিল বায়ুমণ্ডলে, ৩৯টি ভূগর্ভে এবং ৩টি জলে।
বিশ্বের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন রাশিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা পুনর্গঠন এবং নিকটবর্তী অঞ্চলে এমন পদক্ষেপে ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য এবং নেটো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য এটি একটি বড় সতর্কবার্তা।