আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জগতের বিখ্যাত ধনকুবের ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন— যার নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক পরদিন দেওয়া এই ঘোষণা এখনো পর্যন্ত দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে একটি অনলাইন জরিপ। মাস্ক তার এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন করেছিলেন— তারা কি নতুন একটি রাজনৈতিক আন্দোলন চায়? ১২ লাখেরও বেশি মানুষ সেই জরিপে অংশ নেন, যার মধ্যে প্রায় ৬৫% মানুষ নতুন দল গঠনের পক্ষে রায় দেন।
“আপনারা ২:১ অনুপাতে নতুন দল চান, এবং আপনারা সেটাই পাচ্ছেন,” এক্স-এ লিখেছেন মাস্ক।
“যখন অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করে ফেলা হচ্ছে, তখন আমরা আসলে একদলীয় শাসনের মধ্যেই আছি, গণতন্ত্রে নয়,”— যোগ করেন তিনি।
দুই-দলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ
মাস্ক বারবার উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দুই-দলীয় (রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট) রাজনৈতিক ব্যবস্থা “ভেঙে পড়েছে” এবং তা সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সঠিক বিকল্প তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ‘আমেরিকা পার্টি’-র উদ্দেশ্য, মাস্কের ভাষায়, “জনগণের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া।”
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাত
এই ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ইলন মাস্ক ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এক নতুন কর বিল নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিল অনুযায়ী, ধনীদের কর কমানো হবে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় কমানো হবে, এবং ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) কেনায় প্রণোদনা হ্রাস করা হবে।
মাস্ক, যার ব্যবসা ইভি শিল্পের ওপর নির্ভরশীল, এই বিলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন। রিপাবলিকান সিনেটরদের উদ্দেশ্যে তিনি এক্স-এ লিখেছেন,
“মিথ্যাবাদী,”— এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে জনপ্রচারে নামবেন এবং তাদের মুখ ছাপানো পোস্টার বিলি করবেন।
তিনি আরও বলেন,
“আমি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেব।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বিল আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্পের পাল্টা হুমকি
জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পও চুপ থাকেননি। তিনি মাস্ককে হুমকি দিয়েছেন,
মার্কিন সরকার ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলো থেকে ফেডারেল ভর্তুকি কেটে নিতে পারে। এমনকি তিনি মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করার কথাও বলেন— যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
নতুন দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আমেরিকা পার্টি’-র সামনে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচনে দলের নাম রাখতে হলে ১.১ মিলিয়ন ভোটারের স্বাক্ষর অথবা ৭৫,০০০ নিবন্ধিত সদস্য প্রয়োজন। এসব বাধা পেরিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া সহজ হবে না।
তবে ইলন মাস্কের বিপুল জনপ্রিয়তা, অর্থনৈতিক শক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এই দলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে, বলছেন অনেকেই।
সংক্ষিপ্ত তথ্য: