ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর তোড়জোড়, বন্ধ হচ্ছে ম্যানচেস্টার রুট
এ বছরই বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন পুরোদমে কাজ করছে। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)-র সঙ্গে এ মাসেই বৈঠকে বসবে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-ম্যানচেস্টার রুট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী এপ্রিলের পর থেকে এ রুটে টিকিট বুকিং বন্ধ থাকবে। বিমান কর্তৃপক্ষের মতে, এই রুটটি আর্থিকভাবে লাভজনক নয়।
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের প্রস্তুতি
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনের বর্তমান ক্যাটাগরি-২ অবস্থার কারণে নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে বেশ কয়েকবার তদন্তের পরেও এফএএ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়নি। ফলে ক্যাটাগরি-১ অনুমোদন মেলেনি।
২০০৬ সালের শেষ দিকে নিউইয়র্ক রুটে ডিসি-১০ দিয়ে ফ্লাইট বন্ধ করার পর থেকে বহু চেষ্টা করেও এ রুটটি পুনরায় চালু করা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন নিরাপত্তা অডিটের শর্ত আরোপ করেছে। যদিও সিভিল অ্যাভিয়েশন বেশ কিছু শর্ত পূরণ করেছে, তবে এখনও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন জানায়, গত ডিসেম্বরে এফএএ-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এই রুট চালুর জন্য বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এফএএ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
এ প্রসঙ্গে বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাফিকুর রহমান জানান, ক্যাটাগরি-১ অনুমোদন পেলেই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। বিমান ইতোমধ্যে নতুন প্রজন্মের বোয়িং প্রস্তুত রেখেছে। যদি ক্যাটাগরি-১ অনুমোদন না মেলে, তবে কোনো উন্নত দেশে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
ম্যানচেস্টার রুট বন্ধের সিদ্ধান্ত
অন্যদিকে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-ম্যানচেস্টার রুট বন্ধের সিদ্ধান্তে। সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখে ২০২০ সালে চালু হওয়া এ রুটে প্রথমে তিনটি ফ্লাইট পরিচালিত হতো। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে একটি ফ্লাইট বন্ধ করা হয়। এ বছরের এপ্রিল থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রিও বন্ধ থাকবে।
উত্তর ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম, নিউক্যাসল, এবং স্কটল্যান্ডসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাসীরা ম্যানচেস্টার-সিলেট সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে সহজে যাতায়াত করতেন। প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বাস করেন ম্যানচেস্টারে। প্রবাসীরা দাবি করছেন, লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের মতে, বিজনেস ক্লাসের আসন ফাঁকা থাকায় এ রুটটি অলাভজনক। বর্তমানে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে প্রতি সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রবাসী ও সিলেটের মানুষ এ রুট বন্ধ না করে ফ্লাইট বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
বিমান বহর ও রুট সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ৭০টি দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট রয়েছে। নতুন রুট সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ২০২২ সালে ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট চালু করা হয়। চীনের গুয়াংজু, কুনমিং, জাপানের নারিতা এবং ভারতের চেন্নাইতেও ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
তবে রুট সম্প্রসারণ এবং নির্ভরযোগ্য শিডিউল বজায় রাখতে আরও নতুন উড়োজাহাজ প্রয়োজন। বিমান কর্তৃপক্ষের মতে, এই মুহূর্তে অন্তত চারটি মাঝারি ও বড় উড়োজাহাজ দরকার।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ঢাক-সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটটি অলাভজনক বলে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বোর্ড। তিনি বলেন, বিজনেস ক্লাস এখানে খালি থাকে শুধু ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী দিয়ে রুট চালানো সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে, সরাসরি সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে দুটি ও হিথ্রো বিমানবন্দরে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান।
ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ ইতিবাচক বার্তা দিলেও সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা চলছে। প্রবাসীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে রুটগুলো পুনর্বিবেচনা করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।