চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযানঃ সঙ্গী কার্ডিফের স্মৃতি
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইতিমধ্যে পৌছে গেছে বাংলাদেশের বহর। বিপিএল এর প্লে অফ কিংবা ফাইনাল থেকে ছোট্ট বিরতি, এরপরই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অনুশীলন ক্যাম্প আর সপ্তাহখানেকের ব্যবধানেই ভিন দেশের মাটিতে। কিন্তু তাতে কি, প্রথম দিনের অনুশীলনে চনমনে বাংলাদেশকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে এই ক্রিকেটাররা প্রায় দেড় মাসের বিপিএল সিজন কেবলই শেষে করে পাড়ি জমিয়েছেন দুবাইতে।
মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু ঢাকার বুকে। তবে স্বাগাতিক বাংলাদেশ অংশ নিতে পারেনি প্রথম আসরে। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ এবং এরপর সুযোগ পেয়েছে আরো ২ বার ২০০৬ আর ২০১৭ তে । অন্যান্য আইসিসি টুর্নামেন্টের মত প্রতিবারই ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে দেশে ফিরেছে দল। তবে ২০১৭ এর টুর্নামেন্টটা আলাদা করেই মনে রাখতে চাইবে বাংলাদেশ দল। যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সাফল্য সেবারই, বাংলার টাইগাররা খেলেছিল টুর্নামেন্টের সেমি ফাইনাল। মোসাদ্দেকের আন্ডাররেটের বোলিং ফিগার কিংবা সাকিব-রিয়াদদের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য কামব্যাকের গল্প – দলকে নিয়ে গেল শেষ চারে। নিন্দুকেরা অবশ্য বৃষ্টিকেই কৃতিত্ব বেশি দিচ্ছিলেন। টুর্নামেন্টে শেষ হাসি হেসেছিল পাকিস্তান। প্রায় দীর্ঘ আট বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারী সেই পাকিস্তানের মাঠেই ফিরছে এই আসর।
কার্ডিফের স্মৃতিটাই খুব করে ফিরিয়ে আনতে চাইবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিউইদের সাথে টপ অর্ডার ধ্বসে যাওয়ার পর সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়া, বাকিটা ইতিহাস। সাইলেন্ট কিলার কিংবা দুঃসময়ের কাণ্ডারি যে নামেই ডাকুন না কেন, তার থেকেই দলের চাওয়াটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। বিপিএল এর সাম্প্রতিক ফর্মটাও আশার পালে দিচ্ছে হাওয়া। সেদিক থেকে একেবারেই উল্টো মেরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত আসরে ২ হাফ সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম। বিপিএলে ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি খুব একটা সুবিচার করতে পারেননি। বিপিএল এর প্রতিটি আসরে ফিফটি পাওয়া মুশফিকুর রহিম এবার আর অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেননি রেকর্ডটি। তবে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সেনানীর ব্যাটে সাফল্যের স্বপ্ন দেখে অসংখ্য ভক্ত সমর্থক।
দুই অভিজ্ঞ ক্যাম্পেইনারকে একপাশে রাখলে, দলকে প্রচন্ড তারুণ্য নির্ভর বলে মনে হয়। বিপিএলে পর্যাপ্ত ম্যাচ না পাওয়া শান্তর নেতৃত্বে মাঠে নামবে এক ঝাক তরুন। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজের নেতৃত্বে খেলেছিলেন শান্ত। এবার শান্তর নেতৃত্বে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে মাঠে নামবেন মিরাজ, তাও আবার সহ-অধিনায়ক হিসাবে। বিপিএল এর টুর্নামেন্ট সেরা হওয়াটাই জানান দিচ্ছে কতটা ছন্দের আছেন মিরাজ। ব্যাট হাতে বিপিএল ফর্মের কারনে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাবেন কিনা, তা হয়তো সময়ই বলে দিবে। আশা দিচ্ছে তাসকিনের দুর্দান্ত বিপিএল ফর্ম। বল হাতে বনে গেলেন বিপিএল এর এক আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।
জুনিয়র তামিমের ঝড়ো ব্যাটিং, তানজিম সাকিবের অ্যাগ্রেশন, রিশাদের স্পিন ভেল্কি কিংবা জাকের আলীর পাওয়ার হিটে বলকে মাঠের বাইরে আছরে ফেলা – এর মাঝেই সাফল্যের স্বপ্ন দেখে ভক্ত-সমর্থকেরা। স্বপ্ন দেখে ইতিহাস বদলাবার। তারুণ্যের এই জোয়ার নিয়ে স্বপ্নে মজে আছে কোটি ভক্ত। এবার স্বপ্নপূরন হবে কি? সময়ই হয়তো ফিরিয়ে দিবে কিংবা ধরা দেবে স্বপ্ন।