বিভিন্ন পদক্ষেপে করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ সরকারের
সরকার করজাল সম্প্রসারণের জন্য নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের করের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও করের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কর প্রদানে সক্ষম অথচ কর দেন না—এমন ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে চলমান তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডিসিরা নিজেরাই সভায় বলেছেন, গ্রামাঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী ভালো আয় করলেও কর দেন না। তাই করজাল বাড়াতে এনবিআর এখন নতুন উদ্যোগ নেবে। দেশে প্রায় ৫০-৬০ লাখ শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাত্র ৫ লাখ প্রতিষ্ঠান কর দেয়। সরকার করের হার জোরপূর্বক না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের চিকিৎসক ও আইনজীবীরা সাধারণত নগদ টাকায় ফি গ্রহণ করেন এবং অনেক সময় সেবাগ্রহীতাকে কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। ফলে তাদের আয় করের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে ফি গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনলে রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে। বিদেশে এমন ব্যবস্থাই প্রচলিত। আইনজীবীসহ অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রমজানে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি রাখার নির্দেশনা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আসন্ন রমজান ও গরমের মৌসুমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই নির্দেশনা মানা না হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্ধারিত টিম বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় লোডশেডিং হতে পারে।
তিনি জানান, শীতকালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট থাকলেও গ্রীষ্মে তা বেড়ে ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছে যায়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাশ্রয় করা সম্ভব হলে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার কাজ চলছে। প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হবে, যেখানে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা শনাক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ভাতা প্রদান করা হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন, ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন, আর ‘সি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা পুনর্বাসন ও সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
রমজানে এক কোটি পরিবার পাবে বিনামূল্যে চাল
খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, আসন্ন রমজানে এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। পাশাপাশি, মার্চ ও এপ্রিলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩ লাখ টন চাল ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পরিবার ৩০ কেজি চাল ১৫ টাকা কেজি দরে পাবে।
এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে দুই মাসে আরও ১ লাখ টন চাল এবং ওএমএসের মাধ্যমে ১ লাখ টন চাল বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব ডিসিদের দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির বড় অভিযোগ ধামাচাপা পড়ছে: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, সমঝোতার মাধ্যমে অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই বড় দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় হতে হবে। জেলা প্রশাসকরা দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে আরও বেশি ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুদক সাধারণত ৯০-৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরোনো দুর্নীতির মামলায়। তবে ভবিষ্যতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ৫০ শতাংশ, চলমান দুর্নীতিতে ৩০ শতাংশ এবং পুরোনো দুর্নীতিতে ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় থাকা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও বাস্তব প্রয়োজনে নির্বাহী প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা প্রয়োজন।
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে
উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
ভাতা ব্যবস্থায় অনলাইন পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ জানিয়েছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় ১০০ টাকার মধ্যে ৪৬ টাকা প্রকৃত সুবিধাভোগীর হাতে পৌঁছায় না। এ সমস্যা সমাধানে ভাতা প্রদানের জন্য নতুন করে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করা হবে।
এ ছাড়া, জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে ভাতা বিতরণ আরও স্বচ্ছ হয় এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা ভাতা পান।
এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো।